বিনোদন

সংগীতজীবনে ছয় দশক পার করলেন নাচের সেই মেয়েটি

সংগীতজীবনে ছয় দশক পার করলেন নাচের সেই মেয়েটি
গান রেকর্ডিংয়ের হিসাবে সংগীত জীবনের ৬০ বছর পার করলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা। তবে তাঁর শুরুটা হয়েছিল নাচ দিয়ে। ছোট্ট রুনা লায়লার লম্বা সময় কেটেছে পাকিস্তানের করাচিতে। বাবা এমদাদ আলী ছিলেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা। সেখানে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে মেয়েকে নাচ শেখার জন্য ভর্তি করেন মা আমিনা লায়লা। এই প্রতিষ্ঠানে চার বছর নাচ শিখেছেন রুনা। শিক্ষক ছিলেন আফরোজা বুলবুল। রুনা তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন কত্থক আর ভরতনাট্যম। রুনা লায়লা এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘এখন আর সেসব মনে নেই। তবে মঞ্চে যখন গান করি, নিজের অজান্তেই তখন নাচের কিছু মুদ্রা চলে আসে।’ ১৯৬৪ সালের এই দিনে(২৪ জুন) ‘জুগনু’ সিনেমার গানে প্রথম কণ্ঠ দেন। ওই সময় ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কি পেয়ারি’ উর্দু ভাষার গানটিতে অনিন্দ্য কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কি দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন ১২ বছর বয়সী রুনা লায়লা। গানটির কথা লিখেছিলেন তিসনা মেরুতি, আর সুর করেছিলেন মানজুর।  প্রথম গানেই বাজিমাত করেন সংগীতপ্রেমিদের। দুই বছর পর উর্দু ভাষার হাম দোনো চলচ্চিত্রে “উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা” গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। আর গানের ভুবনে শুরু হয় তার দুর্বার পথচলা। দীর্ঘ সংগীত জীবনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পী ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি  গান গেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতায় “সাধের লাউ” (সিলেটি গান) এর রেকর্ড করেন।  একই বছর মুম্বাইয়ে তিনি প্রথমবারের মত কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এসময়ে দিল্লিতে পরিচালক জয়দেবের সাথে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন। `এক সে বাড়কার এক’ চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে তিনি সংগীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সাথে প্রথম কাজ করেন। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। তিনি "ও মেরা বাবু চেল চাবিলা" ও "দামা দম মাস্ত কালান্দার" গান দিয়ে ভারত জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। হিন্দি চলচ্চিত্রসহ বাংলা গানের গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পী লাহিড়ীর সঙ্গে প্লেব্যাক করেছেন বাংলা ও হিন্দি সিনেমায়। সংগীত জীবনে দীর্ঘ ছয় দশক পার করার জন্য রুনা লায়লাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তার ভক্ত থেকে শুরু করে শোবিজ অঙ্গনের সবাই।  ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন গায়িকার ভাই, মেয়ে ও স্বজনরাও।  সংগীত জীবনে ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে রুনা লায়লা বলেন, ‘আপনাদের দোয়া, আশীর্বাদ ও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আজ আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসা, আশীর্বাদ ও শ্রদ্ধা যেন চিরকাল থাকে আমার সাথে।’ রুনা লায়লার স্বামী ও ঢাকাই চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রুনা কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। ৬০ বছর টিকে থাকা এরকম সিরিয়াস না হলে, এরকম প্র্যাকটিস না করলে কোনো দিন সম্ভব নয়। ’ আলমগীরের কন্যা  আঁখি আলমগীর গণমাধ্যমে বলেছেন,‘আমরা অনেক গর্বিত যে আমাদের একজন রুনা লায়লা আছেন। ‘ ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারতীয় জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সনু নিগাম বলেন, ‘আপনি এত ভালো কলাকার, আপনি এত সুন্দর, আপনার ব্যবহার এত ভালো। আপনার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। যখন থেকে আমার চোখ খুলেছে, তখন থেকে আপনাকে শুনছি। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। পৃথিবী আপনাকে ভালোবাসে, আমি আপনাকে ভালোবাসি।’ পাকিস্তানের অভিনেতা ইমরান আব্বাসও রুনা লায়লাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডলে বলেছেন, ‘আপনি বাকি জীবন গাইতে থাকুন, পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করুন। পাকিস্তান থেকে ভালোবাসা জানাই।’ একসময়ে পাকিস্তানের উর্দু সিনেমার জনপ্রিয় প্লেব্যাক সিংগার ছিলেন শিল্পী রুনা লায়লা। বহু সিনেমায় করেছেন প্লেব্যাক। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-‘হাম দোনো’, ‘দিল আউর দুনিয়া’, ‘কমান্ডার’, ‘উমরাও জান আদা’, ‘আন্দালিব’, ‘নসীব আপনা আপনা’, ‘দিল আউর দুনিয়া’, ‘আনমোল’, ‘নাদান’, ‘রিশতা হ্যায় পেয়ার কা’,  ‘দিলরুবা’সহ বেশকিছু সিনেমা। ১৯৭০ সালের ২৯ মে মুক্তি পাওয়া নজরুল ইসলাম পরিচালিত সিনেমা ‘স্বরলিপি’তে প্লেব্যাক করেন রুনা লায়লা।  এটি তার প্রথম বাংলাদেশি সিনেমায় প্লেব্যাক করা।  এই সিনেমার ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি  দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।  প্রথম প্লেব্যাক করেই ব্যাপক সাড়া ফেলেন। তখন থেকে উর্দুর পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের গানে রুনা লায়লার কণ্ঠের কদর বেড়ে যায়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এসে রুনা লায়লা একে একে ‘জীবন সাথী’, ‘টাকার খেলা’, ‘কাজল রেখা’, ‘সারেন্ডার’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘হারানো সুর’, ‘দাঙ্গা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ‘পাঙ্কু জামাই’, ‘দুই দুয়ারী’সহ বহু সিনেমায় গান গেয়ে শ্রোতা-দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে রুনা লায়লা স্বাধীনতা পদক পান।  এছাড়া, ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার-দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং পাকিস্তানের নিগার পুরষ্কারও পান উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পী। এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সংগীতজীবনে | ছয় | দশক | পার | নাচের | মেয়েটি