গেলো ১৭ জুন থেকে সৃষ্ট বন্যার রেশ কাটাতে না কাটাতে আবারও বন্যার আতঙ্কে সিলেটে জনজীবন। সীমান্তের ওপারের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির অবিরাম ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল আবার ও প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সুনামগঞ্জ সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লোকালয়ে পানি উঠায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আবার ও মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। গেলো ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩১৩ মিলিমিটার।
এতে সুরমা নদীর তীরবর্তী সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় পানি প্রবেশ করছে। শহরের অনেক রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। তেঘরিয়া, বড়পাড়া,উত্তর আরপিন নগর, বাজার, কাজীর পয়েন্ট, ষোলঘর, নবীনগর সুলতানপুর, ধোপাকালীসহ অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত লোকজন ইতিমধ্যেই অনেক আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
দোয়ারাবাজারের লক্ষ্মীপুরের খাসিয়ামারা নদী, চিলাই নদীর পানি বাড়ছে। তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা, রক্তি, মাহারাম, বৌলাই, পাটলাই নদীসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার ইউএনও মেহের নিগার তনু জানিয়েছেন, দোয়ারাবাজার উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন যেমন লক্ষীপুর, সুরমা, বোগলাবাজার মান্নারগাঁও ও সদর ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও কেউ উঠেনি। তবে শুকনো খাবার বিতরণ করা শুরু হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার ইউএনও সালমা পারভীন ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ইউএনও মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের উপজেলার অনেক জায়গাতেই রাস্তাঘাট ও ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করার ফলে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছেন। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ইউএনও মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ২২ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে ইতিমধ্যেই ৭টিতে মানুষ উঠেছে।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন জানান, আনোয়ারপুর সড়ক প্লাবিত।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও মৌসুমী মান্নান জানিয়েছেন, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত। তাদের পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবিলার জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে। ইতিমধ্যেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভা করে সকল ইউএনওদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
টিআর/