মৃত্যুর চার দিন পর মাতৃভূমিতে ফিরলো দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের মরদেহ। গেলো ২৫ জুলাই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। এদিন বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় তাকে বহন করা উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন এরশাদুল হক টিংকু; যিনি মাইলস সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত লম্বা সময় ধরে।
টিংকু জানান, শাফিন আহমেদের কফিন সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরে বিমানবন্দর থেকে বের করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরায়, শিল্পীর বাসায়। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হবে একটি হাসপাতালের হিমঘরে। সেখান থেকে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জোহরের নামাজের সময় নেয়া হবে গুলশান আজাদ মসজিদে।
এরশাদুল হক টিংকু বলেন, ‘শাফিন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা এরই মধ্যে জানাজা, দাফন ও কুলখানির সময় সূচি ও স্থানের বিষয়ে পারিবারিকভাবে জানিয়েছেন সবাইকে। ফলে তার আগে শাফিন আহমেদের মরদেহ ঘিরে ভক্ত বা গণমাধ্যমের কোনো ভিড় প্রত্যাশা করছেন না তারা। এই সময়টুকু তারা নিজেদের মতো করে থাকতে চাইছেন।’
আগেই শাফিন আহমেদের বড় ভাই হামিন আহমেদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বাদজোহর গুলশান আজাদ মসজিদে হবে জানাজা। এরপর বনানী কবরস্থানে হবে দাফন। যেখানে শায়িত আছেন তাদের বাবা সংগীতগুরু কমল দাশ গুপ্ত এবং মা কিংবদন্তি নজরুলশিল্পী ফিরোজা বেগম।
পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে কুলখানির বিষয়েও। শাফিন আহমেদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কুলখানি হবে শুক্রবার (২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর বনানী কবরস্থানের পাশে গুলশান কমিউনিটি মসজিদে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের দুই মহারথী সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং সুরকার কমল দাশগুপ্তের ছেলে শাফিন আহমেদ। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছোটবেলা থেকেই গানের আবহে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত আর মায়ের কাছে নজরুলগীতি শিখেছেন।
বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমা সংগীতের সঙ্গে সখ্যতা হয় শাফিন আহমেদের। শুরু হয় এই গায়কের ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা। ১৯৭৯ সালে একরকম শখের বশেই গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন তারা। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম বের হয় ১৯৯১ সালে।
মাইলসের সঙ্গে তিন দশকের পথচলার সমাপ্তি টেনে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বেরিয়ে আসেন শাফিন আহমেদ। তবে তার সংগীত যাত্রা চলতে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সলো অ্যালবামও জনপ্রিয় হয়।
পরে নিজের ব্যান্ড দল ‘ভয়েস অব মাইলস’ গড়ে তোলেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই দলকেই এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছিলেন শাফিন। তবে খুব বেশি দূর যাওয়ার আগেই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
এসি//