হলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি ‘প্রিটি ওম্যান’ এর ভিভিয়ানের একটি দৃশ্য মনে আছে কী? ভিভিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হলিউড অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস। ছবির একটি দৃশ্যে দেখা যায় ভিভিয়ান কিছু জামাকাপড় ও ব্যাগ কেনার জন্য একটি অভিজাত শপিং সেন্টারে যান এবং বিক্রয়কর্মীদের ব্যাগ দেখাতে বলেন। তবে পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে বিক্রয়কর্মীরা ভাবেন, শপিং ব্যাগ কেনার জন্য প্রযোজনীয় অর্থ ভিভিয়ানের কাছে নেই। ফলে উপেক্ষা করে বিক্রয়কর্মীরা তাকে শপিং ব্যাগ দেখাননি। পরের দিন দামি পোশাক পরে ওই দোকানে গেলে তাদের ব্যবহার পাল্টে যায়। তারা ভিভিয়ানের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে পোশাক দেখাতে থাকেন। তখন ওই বিক্রয়কর্মীদের ‘বিগ মিসটেক’ বলে অবজ্ঞার প্রতিশোধ নিয়েছিলেন জুলিয়া রবার্টস।
‘প্রিটি ওম্যান’ সিনেমার এই দৃশ্যটা এবার বাস্তবে ফিরে এসেছে চীনের এক তরুণীর জীবনে। আর ইন্টারনেট জগত এঘটনাকে ‘বছরের সেরা মধুর প্রতিশোধমূলক কাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। গণচিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পর্যটন শহর চংকুইং। এই শহরে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল পোশাকের ব্রান্ড হিসেবে পরিচিত লুই ভিটনের একটি অভিজাত শপিং সেন্টার। ফ্রান্সভিত্তিক এই বিলাসবহুল শপিং মলেই ঘটেছে ওই তরুণীর মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনা।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শপিংমলে বেশ কয়েকটি পোশাকসহ অন্যান্য জিনিস ওই তরুণীরপছন্দ হয়। চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম জিয়াওহংসুর ইউজারধারী জিয়াওমেয়রেন নামে ওই তরুণী সেসব কিনতেও চান। একসময় জিনিসের দাম দেওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে নোটের বান্ডিলও বের করে দেন। শপিংমলের ওই দোকানের বিক্রয়কর্মীরা সেই নোটের বান্ডিল দেখে প্রথমে কিছু অবাক হলেন। তারপর গুনতে শুরু করলেন। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লাগল টাকা গুনতে। আর গোনা শেষ হতেই ওই নারী সব নোট ফেরত নিয়ে ব্যাগে ভরে ফেলেন। আর সঙ্গীকে নিয়ে স্টোর থেকে বেরিয়ে যান। বিক্রয়কর্মীরা এতে হতভম্ব হয়ে যান। কিন্তু, কেন এমন করলেন ওই তরুণী? তাঁর এই ‘প্রতিশোধের’ কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন ওই তরুণী নিজেই।
ওই তরুণী জানান চলতি বছরের জুন মাসে একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের শপিং সেন্টারে তিনি পোশাক কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সাধারণ পোশাক দেখে স্টোরের কর্মীরা তাঁকে উপেক্ষা করেন। ওই নারীর অভিযোগ,তিনি পানি পান করতে চাইলেও তাকে পানি দেননি স্টোরের কর্মীরা। ওইসময় তিনি স্টোর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করেছিলেন। তবে কোনো জবাব পাননি।
পরে এই উপেক্ষারই ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন ওই নারী। ঘটনার মাস দুয়েক পর, বান্ধবীকে নিয়ে ওই শপিং সেন্টারে স্টোরে যান। এবার তাঁর পরনে ছিলো অত্যন্ত দামি পোশাক। দোকানে প্রবেশ করে কয়েকটি পোশাক পছন্দ করেন এবং সেগুলো কিনতে চান। তারপর পোশাকের দাম হিসেবে ব্যাগ থেকে নোটের বান্ডিল বের করে কর্মীদের দেন। পোশাকগুলোর মোট মূল্য ছিল ৬ লাখ ইউয়ান। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ এক কোটি ৩৫ হাজার টাকার বেশি। স্টোরের কর্মীদের ওই টাকা গুনেতে সময় লাঘে প্রায় দুই ঘণ্টা।
টাকা গোনা শেষ হতেই বিক্রয়কর্মীদের ওই তরুণী জানিয়ে দেন, তিনি সিদ্ধান্ত বদলেছেন। জিনিসগুলো এখন কিনবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই তরুণী লিখেছেন, “গোনা শেষ হতেই আমি আমার টাকা ফেরত নিই এবং চলে আসি। বিক্রয়কর্মীদের কাজের পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য তাদের পণ্যগুলি কেনা আমার পক্ষে কীভাবে সম্ভব?’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর এই পোস্ট। অনেকেই তাঁর এই ‘মধুর প্রতিশোধের’ প্রশংসা করেছেন। কেউ লিখেছেন, ‘বছরের সেরা স্বস্তিকর বদলা’।
এমআর//