আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। গতকাল প্রত্যেকটি পাওয়ার প্লান্টেই কিছু না কিছু ঘটেছে। বললেন পিজিসিবির তদন্ত কমিটির প্রধান ও পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি) ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী। 

আজ বুধবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। পিজিসিবির পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী।

ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ঘুরে আমরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছি। এগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এখনই গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা যাবে না। সব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বিভিন্ন কারণে সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কোনো কারণে এটি বেড়ে গেলে কিংবা কমে গেলে দেখা দেয় গ্রিড ট্রিপ। প্রাথমিক অবস্থায় মঙ্গলবারের ব্ল্যাকআউটের মূল কারণ ছিল এই গ্রিড ট্রিপ। তবে ঠিক কী কারণে এ গ্রিড বিপর্যয় ঘটল, তা এখনও জানায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিজিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট দুর্বল। মূলত এখানে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন প্রয়োজন। না হলে, সামান্য ভোল্টেজের ওঠানামা বা ফ্রিকোয়েন্সি ডাউন হয়ে গেলে এমন দুর্ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।

তবে গ্রিড ট্রিপের ব্যাপারে পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (সঞ্চালন-১) মোরশেদ আলম খান বলেন, ফ্রিকোয়েন্সি ডাউন হয়েছে মূলত টেকনিক্যাল কারণে। আমাদের এখানে পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ নেই। বর্তমান বিশ্বে যেটা আধুনিক, সেটাই ব্যবহার করছি। ঠিক কী কারণে গ্রিড ট্রিপ হলো, এটি নিয়ে কমিটি তদন্ত করছে।

গ্রিড বিপর্যয় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ব্যবস্থা এখনও রয়ে গেছে মান্ধাতা আমলের। এতে প্রায়ই ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারসাম্যজনিত তারতম্য দেখা যায়, ঘটে বিপর্যয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) কোন এলাকায় কত ঘণ্টা, কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও উৎপাদন হবে, তা এখনও ফোনে ফোনে ঠিক করে দেয়। এতে একটি ছোট বিপর্যয় সামাল দিতেও লেগে যায় দীর্ঘ সময়।

মূলত বিদ্যুৎপ্রবাহের ফ্রিকোয়েন্সিতে (তরঙ্গ) গরমিলের কারণে ব্ল্যাকআউটের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎপ্রবাহের রকমফের হলে বড় রকমের বিপর্যয় এড়াতে নিজ থেকে বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। একে বলে গ্রিড ট্রিপ (বিপর্যয়)।

এর আগে টানা ৬-৭ ঘণ্টা অন্ধকারে ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের এলাকার কয়েক কোটি মানুষ। এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার ব্ল্যাকআউট হয়।

দেশে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পটিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ এখনও অর্ধেকের বেশি বাকি। সাত প্যাকেজের আওতায় চলছে এ কাজ। এর মধ্যে যমুনা ও পদ্মা নদীর এপার-ওপার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে কাজ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এ ছাড়াও হাতে রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প। কিন্তু সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি না করে একের পর এক কেন্দ্র বসিয়ে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যাবে না–এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপ্লব আহসান 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বিদ্যুৎ | বিপর্যয়ের | কারণ