প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অসংখ্য কালজয়ী গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ৭১ তম জন্মবার্ষিকী এই গুণী সংগীতশিল্পীর।
১৯৫৩ সালে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার নন্দীপাড়ায় এক সংগীতপ্রেমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুবীর নন্দী। তার বাবা সুধাংশু নন্দী ছিলেন চিকিৎসক এবং মা পুতুল রানী গান গাইতেন। মায়ের কাছ থেকেই সংগীতের প্রথম পাঠ নেন তিনি। পরে ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন।
শৈশব কাটে চা-বাগানের পরিবেশে। হবিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সেই সময় থেকেই গানের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা আরও দৃঢ় হয়।
১৯৭০ সালে তার প্রথম গান 'যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়' রেকর্ড হয়। মোহাম্মদ মুজাক্কেরের কথায় ও ওস্তাদ মীর কাসেমের সুরে এই গান প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সুবীর নন্দীর গানের যাত্রা আর থেমে থাকেনি। বেতার থেকে চলচ্চিত্র—সব মাধ্যমেই তাঁর গান শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে।
সুবীর নন্দীর জনপ্রিয় গানের তালিকা দীর্ঘ। এর মধ্যে 'আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি,' 'কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো,' 'বন্ধু হতে চেয়ে তোমার,' এবং 'আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়' গানগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার ২৪টির মতো একক অ্যালবাম এবং শতাধিক চলচ্চিত্রে গান রয়েছে।
তিনি ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
২০১৯ সালের ৭ মে, দীর্ঘদিন কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সংগীতপ্রেমী জাতি হারায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সুবীর নন্দীর গান শুধু বিনোদন নয়, তার সুরে ছিল একধরনের আত্মার পরশ। আজও তার গান শুনলে মনে হয়, তিনি আমাদের মাঝেই আছেন। সুবীর নন্দীর প্রতি আজকের দিনে রইল গভীর শ্রদ্ধা। তার সুরের জগৎ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জেডএস/