ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের বেশকিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়িয়েছে। এসব ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় ভারতের ৪৯টি গণমাধ্যমের জানা গেছে বাংলাদেশে তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে। রিউমর স্ক্যানারকে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক (আন্তর্জাতিক তথ্য যাচাই নেটওয়ার্ক) স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব গণমাধ্যমে ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে।
এরমধ্যে ভারতের গণমাধ্যম রিপাবলিক বাংলা সবচেয়ে বেশি ৫টি গুজব প্রচার করেছে। এরপর রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ ও লাইভ মিন্ট;। এসব প্রতিষ্ঠান তিনটি করে গুজব প্রকাশ করেছে। আর দুটি করে গুজব প্রচার করেছে রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ ও আজতক।
ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ানো বাকি ৪১টি গণমাধ্যম হলো এনডিটিভি, ইকোনমিক টাইমস, এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই), ফ্রি প্রেস জার্নাল,দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ফার্স্টপোস্ট, অপি ইন্ডিয়া, মিরর নাউ, ইন্ডিয়া ডটকম, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, আরটি ইন্ডিয়া, সংবাদ প্রতিদিন, জি২৪, দ্য প্রিন্ট, দ্য স্টেটসম্যান, উইয়ন, ওয়ান ইন্ডিয়া, সিএনএন নিউজ ১৮, দ্য ওয়্যার, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, এই মুহূর্তে, মাতৃভূমি, নিউজ ৯, ক্যালকাটা নিউজ, হেডলাইনস ত্রিপুরা ন্যাশনাল, টাইমস নাউ নিউজ, দ্য ওয়াল, নিউজ ২৪, পুবের কলম, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া, এনই ইন্ডিয়া ব্রডকাস্ট, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, টিভি ৯, লোকমাত টাইমস, পিটিসি নিউজ, নিউজ এক্স, দ্য টাটভা, স্বরাজ্য, নিউজ বাইটস, ভাইবস অব ইন্ডিয়া ও বর্তমান পত্রিকা।
ভুয়া খবর ও গুজবের মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তাঁর নামে ভুয়া খোলাচিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি এবং ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূসের ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি।
এছাড়া পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে প্রচার, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব, বাংলাদেশে ভ্রমণ নিয়ে যুক্তরাজ্যের জারি করা একটি ভ্রমণ সতর্কতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ভুয়া খবর ও গুজবের মধ্যে আরও রয়েছে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় চিকেন নেকের কাছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটি নির্মাণ করবে। অথচ রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব খবর পুরোপুরি মিথ্যা।
পাশাপাশি ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবি, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য প্রচার করে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি, চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির ছবি নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়। দাবি করা হয় রমেন রায় নামে ওই ব্যক্তি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী। অথচ এই তথ্য সত্য নয়।
জজজ--