গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চাঁদা না পেয়ে বিদ্যালয় থেকে ধরে এনে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে। এ সময় শিক্ষকে রক্ষা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভি আহম্মেদ রাজিব।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়ের বঙ্গবন্ধু সরকারি হাইস্কুলের ফটকে বাণিজ্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিনকে মারধর করা হয়। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিক্ষক বশির উদ্দিন বলেন, ‘সকালে যুবদল নেতা রনির নেতৃত্বে ৭-৮ জন আমার অফিস কক্ষে আসেন। তারা টেনেহিঁচড়ে স্কুলের ফটকে নিয়ে কিল, ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভি রক্ষায় এলে তাঁকেও জখম করা হয়। পরে সহকর্মীরা এলে তারা পালিয়ে যান। আমি হামলাকারীদের বিচার চাই।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার বলেন, ‘রনির নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসান, তাজিদ মিয়াসহ কয়েকজন স্কুলে ঢুকে বশির উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। আমরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে রনি বলেন, ‘শিক্ষক বশির উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ দিলেও সঠিকভাবে তদন্ত করেনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে আরেক অভিযোগে তদন্ত কমিটি হয়েছে।মারধরের সঙ্গে আমি জড়িত নই। কেউ হয়ত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। চাঁদা দাবির অভিযোগও ভিত্তিহীন।’
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর যুবদল নেতা রনির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে উপজেলায় সক্রিয় হন। তারা আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সরকারি হাইস্কুলে গিয়ে সাদা কাগজে সই নিয়ে শিক্ষক বশির উদ্দিনকে শারীরিক ও মানসিক নিযার্তন শেষে বের করে দেন।
এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষক। পরে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিলে ক্লাস নিতে বাধা দেবে না জানান রনি। ভুক্তভোগী রাজি না হলে রনি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করে বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নেই বলে প্রতিবেদন দেন। এর পর গত সপ্তাহে বশির উদ্দিন ক্লাসে ফেরেন।
গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা নিশ্চিত করেছেন যে, জড়িত যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন জানান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে তাকে বিতাড়িত করতে চাচ্ছে একটি পক্ষ, এবং সেই কারণেই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি জানান, শিক্ষকসহ দু’জনকে মারধরের খবরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আই/এ