যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক ব্যাপক চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেয়া এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তার বিরুদ্ধে চলা সমালোচনা পদত্যাগের পরও থামেনি। এবার টিউলিপ ইস্যুতে মন্তব্য করেছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ইলন মাস্ক। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি বলেন, “ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই একজন দুর্নীতিবাজ।”
টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিষয়ক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি এবং সিটি মিনিস্টার। তার দায়িত্ব ছিল দেশটির অর্থবাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দুর্নীতি দমন করা। কিন্তু বাংলাদেশে তার এবং পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তের মুখে মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ করেন।
ইলন মাস্ক তার মন্তব্যে আরও বলেন, “শিশুকল্যাণের দায়িত্বে থাকা লেবার মন্ত্রী এমন কিছু লোককে রক্ষা করেছেন, যারা নির্দয়ভাবে মানুষকে শোষণ করেছে। তাদের (লেবার পার্টির) দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতিবাজ।”
পদত্যাগের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কারণ, টিউলিপকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত তার ছিল। একটি লেবার পার্টি এমপি বলেন, “টিউলিপকে মন্ত্রী বানানো ছিল আত্মঘাতী। তার বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে সবারই ধারণা ছিল।”
এদিকে সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, টিউলিপ ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় একটি ফ্ল্যাট উপহার পান। এটি তাকে দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামে একজন ডেভেলপার, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মোতালিফ ২০০১ সালে মাত্র ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন, যা বাজারদরের তুলনায় অনেক কম। কারণ একই বছরে ওই এলাকায় একটি সমমানের ফ্ল্যাট ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) বিক্রি হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।
টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।