যুদ্ধবিরতির খবর শোনার পরই উল্লাসে মেতে উঠেছেন ‘যুদ্ধক্লান্ত’ গাজাবাসী। এযেনো ঈদের চাইতেও বড় আনন্দ তাদের। কয়েক ঘণ্টা ধরে পুরো এলাকায় উদযাপন চলেছে তাদের। গাজাবাসীদের কেউ হাসছেন, আনন্দে স্বজনদের বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ স্বজন হারানোর বেদনায় কাঁদছেন। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে গাজায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বুধবার দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের সামনে ভিড় করে শত শত মানুষ স্লোগান দেন এবং ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে উদ্যাপন করেন। হাসপাতালের দিকে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্সের পথ ছাড়তে গিয়ে মানুষের মুখে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি ওঠে। এসময় এক সাংবাদিককে ভিড়ের ওপর কাঁধে তুলে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
একই সময় গাজার অন্যান্য এলাকাগুলোতেও শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। খান ইউনিসে দেখা যায়, একদল যুবক কাঁধে চড়ে ঢাক বাজিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
এমন দৃশ্যপট সেখানে নিকট অতীতে দেখা যায়নি। কেননা, যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন এবং আহত ব্যক্তিদের যন্ত্রণা আর বিষণ্নতায় এত দিন ভরে ছিল এলাকাটি। শুধু গাজাবাসী নয়। আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন ইসরাইলের সাধারণ জনগণও।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামাতে চুক্তিতে রাজি হয়েছে ইজরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ফলে মুক্তি পাচ্ছে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরাইলি নাগরিকেরা। বিপরীতে গাজায় বন্দ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের রক্তে ইসরাইলি সেনাদের হোলিখেলা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরাইলি সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা। আকাশ, স্থলপথে একযোগে চালানো ওই হামলায় ১২ শতাধিক ইসরাইলি নাগরিককে হত্যা করে। অপহরণ করে ২৫০ জনকে। পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি ইসরাইলও। গাজায় মুহুর্মুহু হামলা চালিয়ে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। বাড়িঘর দূরে থাক, হাসপাতাল, স্কুল বলেও আর কিছু নেই এই উপত্যকায়। ইজরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
গাজায় ইসরাইলের এই ভয়াবহ ধ্বংযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ। যুদ্ধ থামাতে চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, সৌদি আরব, মিশরসহ বেশ কয়েকটি দেশ। মাঝে দু’বার স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল জিম্মি ও বন্দী বিনিময়ের জন্য। তারপর আবার গর্জে ওঠে ইসরাইলের বিমানগুলো। আর গাজায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হতে থাকে মৃত্যুমিছিল।
দীর্ঘ এই ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের আঁচ ক্রমশ গোটা মধ্য প্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। ফিলিস্তিনের সীমানা পেরিয়ে লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া, এমনকী ইরানের উপরেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। পাল্টা জবাব দিয়েছে এই দেশগুলিও। যুদ্ধের মাঝেই ইসরাইল সফলভাবে হামাস ও হিজবুল্লা প্রধানদের হত্যা করেছে। তারপরও কোনোভাবেই থামছিলো না যুদ্ধ।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধবিরতির কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগেও এই নিয়ে আলোচনা হলেও, তা বারে বারে ব্যর্থ হয়েছে মূলত ইসরাইলের আগ্রাসনের কারণে। তবে এবার ট্রাম্প হামাসকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যুদ্ধ না থামালে এবং বন্দীদের মুক্তি না দিলে, ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতেই শেষ পর্যন্ত কাজ হয়। গাজায় ইতি টানতে যাচ্ছে যুদ্ধ।
বিবিসি, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি দুই পক্ষই বন্দীদের মুক্তি দেবে। একদিকে হামাস যেমন ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে, তেমনই ইসরাইলও তাদের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে।
এমআর//