খুনের ব্যাপারটাতে সরি বললে যায় না, প্রত্যেকটা খুনের বিচার হতে হবে। এটা ইনসাফের দাবি। যারা অন্যায়ভাবে, নির্দয়ভাবে হাজার-হাজার ছাত্র-জনতা হত্যা করলেন, আহত করলেন, পঙ্গু করলেন, সাভারে নিহতদের পুড়িয়ে ছাই করলেন, এই খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ। এ ব্যাপারে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বললেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে রংপুর নগরীর শহিদ আবু সাঈদ চত্বরে মহানগর জামায়াতের যুব বিভাগ আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আবু সাঈদ এর মতো সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য রংপুরবাসী আপনারা ধন্য। আপনাদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আপনাদের প্রতি এ দেশ ও জাতি চির কৃতজ্ঞ। আবু সাঈদ এর ঋণ এ জাতি কোনদিন শোধ করতে পারবেনা।কখনো শোধ করা সম্ভবও না।
তিনি আরও বলেন, আবু সাঈদরা রাস্তায় নেমে স্লোগান দিয়েছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ আমরা ন্যায়বিচার চাই, বৈষম্য চাই না। ন্যায়বিচার দাবি হচ্ছে প্রত্যেকটি খুনের বিচার হতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই শহীদ ও আহতরা যে লক্ষ্যে জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে আহত হয়েছে, সে লক্ষ্য পূরণ করাই এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য। ছাত্ররা চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। সে লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমি মহান রবের কাছে দোয়া করি, তিনি যেন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আবু সাঈদ, মুগ্ধ ইয়ামিনের মতো সন্তান গর্ভধারণ করার মতো মা যুগে-যুগে পাঠান। যে সন্তান দেশের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেবে, দুর্নীতি করবে না, লুটপাট করবে না, অর্থ পাচার করবেনা, দেশের স্বাধীনতা সর্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অতন্ত্র প্রহরীর মত ভূমিকা রাখবে এবং সমাজের সার্বিক কল্যাণে সদা সর্বদা তৎপর থাকবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শহিদেরা কি চেয়েছিল, তারা চেয়েছিল একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ। যেখানে চুরি-চামারি, অপরাধ থাকবে না। চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, লুণ্ঠন আর চলবে না। নতুন নতুন আর কোনো আয়নাঘর হবে না। তারা চেয়েছিল মানবিক ও সাম্যের বাংলাদেশ। আমাদের ৩৪ হাজার ভাইবোন ও সন্তান পঙ্গু হয়ে গেছে। ৫০২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই চোখ হারিয়েছে, ৭০০ জনের অধিক এক চোখ নষ্ট অন্য চোখটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আড়াইশো'র বেশি মানুষের মেরুদন্ডে গুলি লেগেছে তারা এখন অবশ হয়ে ঘরে অথবা হাসপাতালের বিছানায়।
জামায়াতের আমির বলেন, এই পরিবর্তনের পরে আমরা দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম তারা যেন শান্ত থাকে। ধৈর্য ধরে তারা যেন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। দগদগে ঘা, শহিদের লাশ, চতুর্দিকে রক্ত, হাসপাতালের মর্গগুলো লাশের স্তুপ। এসময় দেশের মানুষ ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছে। কোথাও কেউ জীবন, সম্পদ ও ইজ্জতের উপর হাত দেয়নি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও রংপুর মহানগরী আমীর উপাধ্যক্ষ এটিএম আজম খান, মহানগর সেক্রেটারি কে আনোয়ারুল হক কাজল, রংপুর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও মহানগর সভাপতি ছাত্র নেতা নুরুল হুদা ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ছাত্রনেতা সোহেল রানাসহ অন্যান্য মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজীর সঞ্চালনায় পথসভায় সভাপতিত্ব করেন, তাজহাট থানা আমীর মাওলানা রবিউল ইসলাম।
জেএইচ