ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ বা এলাহাবাদের মহাকুম্ভে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ছিল পুণ্যার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশসহ নেপালের পুণ্যার্থীদের ভিড়ে অন্যত আকর্ষণ ছিলো বলিউডের এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রীর আগমন। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে গেরুয়া তিলক।
বলিউডের ৯০ দশকের সেই নায়িকা বদলে গিয়েছেন অনেকটাই! দেখে চেনাও দায়! জীবনে বহু সমস্যার পর শেষে বেছে নিলেন সন্ন্যাসিনীর জীবন! ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসী হিসেবে তিনি কুম্ভমেলায় এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন।
অভিনেত্রীর এই সন্যাস জীবন তার ভক্ত ও অনুসারীদের কাছে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে এসেছে।
মহাকুম্ভে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করা এই বলিউড অভিনেত্রীর নাম মমতা কুলকার্নি। মহাকুম্ভের কিন্নর আখড়া থেকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে সালমন-শাহরুখের নায়িকা মমতাকে দেখা গেল গেরুয়া বসনে।
সন্ন্যাস নেওয়ার ফলে নিয়মানুযায়ী বলিউডের এক সময়কার এই হট নায়িকার পরিচয়ও বেদলে গেছে। এখন থেকে তিনি ‘মমতা নন্দ গিরি’ নামে পরিচিত হলেন।
কিন্নর আখড়ায় মহামণ্ডলেশ্বর-এর দায়িত্ব সামলাবেন তিনি।আখড়ায় মহামন্ডলেশ্বর আচার্য লক্ষ্মী নারায়ণের হাত ধরেই শুরু করলেন আধ্যাত্মিক জীবন।
হিন্দি চলচ্চিত্রে ৯০ দশকের সুপারহিট নায়িকা মমতা কুলকার্নি। বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান, সালমন খান থেকে শুরু করে অক্ষয় কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে বহু সিনেমা করেছেন তিনি!
বলিউডের অন্যতম সফল ছবি 'করণ-অর্জুন'-এ শাহরুখ-সলমনের সঙ্গে মমতা কুলকার্নি কাজ করেছেন। ওই সময় অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি নামের অর্থই ছিল যেনো খোলামেলা পোশাক ও বোল্ড সিন! আর বক্সঅফিসে একটা সুপারহিট ছবি!
যেকোনও বোল্ড দৃশ্যে তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করতেন! সাহসী পোশাকে অভিনয় নিয়ে তার সমালোচনাও ছিল প্রচুর।
চায়না গে্ইট’, ‘তিরঙ্গা’, ‘আশিক আওয়ারা’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘বাজ়ি’, ‘সবসে বড়া খিলাড়ি’, ‘পুলিশওয়ালা গুন্ডা’র মতো ছবিতে অভিনয় করার জন্য আজও তাঁকে মনে রেখেছে দর্শক।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি বাংলা সিনেমাতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে!
বাংলাদেশি নির্মাতা শাহ আলম কিরন পরিচালিত ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই প্রযোজিত ‘শেষ বংশধর’ ছবিতেও দেখা গেছে মমতা কুলকার্নিকে। ওই ছবিতে আরও ছিলেন টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা ঘোষ ও ঢালিউড নায়ক মান্না।
একসময় টপলেস ছবি তোলার জন্য গ্রেফতার হতে হয়েছিল এই মমতা কুলকার্নিকে। বোতাম খোলা জিন্স, শরীরের ওপরের অংশ খোলা, হাতের কায়দায় ঢাকা বক্ষযুগল-ছবি মুক্তি পেতেই ঝড় উঠেছিল বলিউডে।
রীতিমতো ২০০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি।
এখানেই শেষ নয় মমতা কুলকার্নির জীবনের অধ্যায়। মমতা কুলকার্নির প্রেমে পাগল ছিলেন মুম্বাইয়ের তৎকালীন অন্ধকার জগতের বড় বড় ডনরাও। লাস্যময়ী নায়িকার প্রেমে পড়েন ছোটা রাজন। যদিও সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এছাড়াও চায়না গেইট ছবির শুটিং চলাকালীন পরিচালক রাজকুমার সন্তোষীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন মমতা। যদিও পরিচালক সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
একের পর এক সফল সিনেমা উপহার দিয়ে খ্যাতির চূড়ায় অবস্থান করার মধ্যেই ২০০০ সালে আচমকাই বিদেশে চলে যান মমতা কুলকার্নী। ২০১৬ সালে ২০০০ কোটি টাকার মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়েন মমতা।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ড্রাগ পাচারের। এ মামলায় মমতা কুলকার্নি ও তার চর্চিত স্বামী আন্তর্জাতিক ড্রাগ লর্ড ভিকি গোস্বামীর( যদিও বিয়ের কথা অস্বীকার করেন মমতা কুলকার্নি) জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ভারতের একটি আদালত।
সম্প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে মামলায় খালাস পেয়ে প্রায় দুই যুগ পর দেশে ফেরেন তিনি। বর্তমানে ৫২ বছর বয়সে এসে এই নায়িকা মহাকুম্ভে হাজির হয়ে নিজের জীবনকে একেবারে বদলে ফেলেছেন। সব কিছু ছেড়ে একেবারে অন্য পথে হাঁটতে শুরু করলেন এই নায়িকা।
আবার কেন বলিউডে ফিরলেন না, এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই পেয়েছেন মমতা কুলকার্নি। তবে অভিনেত্রী জানান, 'আমি জানি অনেকেই আমার এই সিদ্ধান্তে রেগে রয়েছে। তাঁরা ভেবেছিল আমি সিনেমায় ফিরব। কিন্তু আমি জানি এটাই এখন আমার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। এটা ভগবানের ইচ্ছে আর তাঁর ইচ্ছে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে না।'
মহাকুম্ভে আসার কারণ জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মমতা জানান, কালীমার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তিনিই আমাকে সন্ন্যাসগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই কারণেই মহাকুম্ভে আসা।
সন্যাসজীবন বেছে নেওয়া সম্পর্কে মমতা কুলকার্ণি বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে আমি তপস্যা শুরু করেছি। আজ আমার ২৩ বছর পূর্ণ হল। ধ্যান ও তপস্যার মাধ্যমে আমি অনেক কিছু অর্জন করেছি, বহু প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি।”
এমআর//