টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপার স্বাদ পেল ফরচুন বরিশাল। বিপিএল ফাইনালে চিটাগাং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো দলটি। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে আবারও ঘরে ফিরেছে বরিশালের ট্রফি।
ফাইনালে যত রং দরকার ছিল, তার সবটুকু প্রকাশ পেয়েছে এই ম্যাচে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের হোম অব গ্রাউন্ড মিরপুরে শিরোপার লড়াইয়ে নেমেছিল এবারের আসরের শীর্ষ দুই দল। লড়াই হয়েছে সমানে-সমানে, বারবার ঘুরে গেছে ম্যাচের দৃশ্যপট।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা চিটাগাং কিংস সংগ্রহ করে ১৯৪ রান। সেই রান টপকাতে গিয়ে বেশ ভালো শুরু ছিল বরিশালের। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৮ রান প্রয়োজন ছিল। স্ট্রাইকে ছিলেন রিশাদ হোসেন, নন স্ট্রাইকে নতুন ব্যাটার তানভীর ইসলাম। ততক্ষণে বরিশাল হারিয়েছে ৭ উইকেট।
হোসেন তালাতের করা সেই ওভারের প্রথম বলেই দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন রিশাদ। এর আগের ওভারেও এক ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি নিজেদের পক্ষে আনেন খেলা। বড় শট খেলতে পারার দক্ষতা থাকা রিশাদের সামনে তখন ৫ বল, প্রয়োজন ২ রান।
পরের বলে দৌড়ে একটি রান নিয়ে ম্যাচ টাই করেন রিশাদ। চার বলে কেবল এক রান দরকার। অনেকটাই নির্ভার তখন পুরো বরিশাল শিবির। তৃতীয় বল ডট দেন তানভীর। চতুর্থ বলে আসা বাউন্সার উইকেটরক্ষকের হাতে গেলে দৌড়ে রান নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হতে হতে সবাই দেখলো বলটি ওয়াইড দিয়েছেন আম্পায়ার...বাউন্ডারি লাইন থেকে দৌড়ে মাঠে ঢুকলেন বরিশালের মালিকসহ পুরো দল। উৎসবে রঙিন হয়ে উঠলো মিরপুরের সবুজ মাঠ।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বরিশালকে ১৯৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা দেয় চিটাগাং। তামিম ইকবাল ও তাওহিদ হৃদয় মিলে ৭৬ রানের জুটি গড়েন। ফিফটি করা তামিম ৫৪ (২৯) রানে আউট হন। যা ছিল বরিশালের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংস।
আরেক ওপেনার হৃদয় ইনিংস বড় করতে গিয়ে ২৮ বলে ৩২ রান করেই ফিরেছেন। বরিশাল সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় ডেভিড মালানের উইকেট গেলে। শরিফুল ইসলামের ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে মাত্র ১ রানে ফিরেছেন এই ইংলিশ ব্যাটার।
ততক্ষণে একপ্রান্তে হাল ধরার চেষ্টায় কাইল মায়ার্স। জয়ের ভিত গড়ে দিতে এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার বড় ভূমিকা রাখেন। তার ব্যাটে আসে ২৮ বলে ৪৬ রান। সঙ্গে মুশফিকুর রহিম তার ৯ বলে ১৬ রানের ইনিংসে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় দেখিয়েছেন দলকে। এই দুই ব্যাটার মূলত বরিশালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ নবী ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ ছিলেন। আর ওদিক দিয়ে চিটাগাং পেসার শরিফুল ইসলাম ৪ উইকেট নিয়েছেন নিজের ঝুলিতে।
শেষ পর্যন্ত রিশাদের অপরাজিত ৬ বলে ১৮ রানের ইনিংস বরিশাল দর্শকদের জন্য আনন্দের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
চিটাগাং কিংসের পক্ষে বল হাতে শরিফুলের চার উইকেটের পাশাপাশি নাইম ইসলাম ২ টি এবং বিনুরা ফার্নান্দো ১ উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে, দারুণ ব্যাট করেছে চিটাগাং কিংস। ওপেনিংয়ে নামা খাজা নাফি ও পারভেজ হোসেন ইমন মিলে জুটি গড়ে তোলেন। যে জুটি বিপিএল ফাইনালের উদ্বোধনীতে সর্বোচ্চ রানের জুটি হিসেবে রেকর্ড গড়ে। পারভেজ ও নাফির জুটিতেই ১২১ রান সংগ্রহ করে চিটাগাং।
মিরপুরে এমন এক মঞ্চের জন্যই হয়তো প্রস্তুত ছিলেন ইমন। তার সঙ্গে যুক্ত হন পাকিস্তানের নাফি। দুজন মিলে পাওয়ারপ্লেতেই ৫৭ রান তোলেন। পারভেজ প্রতিপক্ষ বোলারদের মামুলি বানিয়ে দেন। নাফিও যেন একই মিশন নিয়ে নামেন। দুজনের ১২১ রানের জুটি যখন ভাঙে, তখন ১২ ওভার ৪ বল।
নাফি ২৩ বলে ৪৪ রান করেন। যে ইনিংসে ছিল ২ চার ও ৩ ছক্কা। পারভেজ ছিলেন অপরাজিত ৪৯ বলে ৭৮ রান নিয়ে। তার ইনিংসে ছিল ৬ টি চার ও ৪ টি ছক্কা।
নাফি ফেরার পর ক্রিজে আসেন গ্রাহাম ক্লার্ক। বরিশালের বোলারদের একই ধাঁচে শাসন করতে থাকেন ক্লার্ক। তিনি ফিরেছেন ইনিংসের শেষ ওভারে রানআউট হয়ে। তার ব্যাটে আসে ২৩ বলে ৪৪ রান। ইনিংসে ছিল ২ চার ও ৩ ছক্কা। সেই ওভারে আর তেমন কিছু ঘটেনি, শামীম পাটোয়ারী এসেও বিদায় নিয়েছেন। হোসেন তালাত এসে দুই বল খেলে কোনো রান নিতে পারেননি, অপরপ্রান্তে থাকা ইমন স্ট্রাইক পাননি।
ফরচুন বরিশালের পক্ষে বল হাতে মোহাম্মদ আলী ১ টি, ইবাদত হোসেন ১ টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন।
এমএইচ//