জাতীয়

জাতিসংঘের প্রতিবেদন

শত শত বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছে শেখ হাসিনার সরকার: জাতিসংঘ

বায়ান্ন প্রতিবেদন

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক অভিমত জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক সরকার। সে লক্ষ্য পূরণে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। 

আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারী ) জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার এমন অভিমত তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ চলাকালে আওয়ামী লীগ সহিংস কর্মকাণ্ড করেছে। সেসময় বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংসতা করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল।

ফলকার টুর্ক আরো বলেন, ‘জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাঁদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’

প্রাণহানির ঘটনাগুলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গেল সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে প্রতিনিধি দল পাঠায়। সেই দলে ছিলেন মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তকাজে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। যেখানে যেখানে প্রবেশাধিকার চাওয়া হয়েছে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। যথেষ্ট নথিপত্র সরবরাহ করেছে।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৪’শ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। আহত করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে।  হতাহতদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন।

যখন সাবেক সরকার দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছিল তখন সংঘটিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক, পুলিশ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের লক্ষ্য করে অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেগুলোও এ প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে । হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর আদিবাসী জনগণও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। তবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের জড়িত প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে অনেক প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং এসব গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের পরেও অপরাধীরা এখনও দায়মুক্তি উপভোগ করছে। এমন মন্তব্য উঠে আসে প্রতিবেদনটিতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

 

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জাতিসংঘ | হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক | আওয়ামী লীগ