দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বিরল এক আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একই সময়ে সেখানে তিনটি ক্রান্তীয় ঝড় সক্রিয় রয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে রে, সেরু ও আলফ্রেড নামের এই তিন ঝড়। পাঁচ দিনের ব্যবধানে তারা সৃষ্টি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় এগুলো ঘূর্ণায়মান। বর্তমানে অঞ্চলটি ঝড়ের মৌসুমের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা দ্য গার্ডিয়ান’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানি-এর বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান ট্যাং বলেন, 'এটি অবশ্যই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য ব্যস্ত সময় এবং তিনটি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন একসঙ্গে দেখা সত্যিই বিরল ঘটনা।' তবে তিনি জানিয়েছেন, এটি একেবারে নজিরবিহীন নয়।
'ট্রপিক্যাল' শব্দের অর্থ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত, অর্থাৎ এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি গরম ও আর্দ্র এলাকায় সৃষ্টি হয়। 'সাইক্লোন' শব্দের অর্থ ঘূর্ণিঝড়, যা কম বায়ুচাপের কারণে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিবাতাসকে বোঝায়। এটি সাধারণত উষ্ণ সমুদ্রের ওপর তৈরি হয় এবং প্রচণ্ড বাতাস, ভারী বৃষ্টি এবং শক্তিশালী ঢেউ সৃষ্টি করে।
এর আগে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে একই সঙ্গে তিনটি ঘূর্ণিঝড়— লুকাস, আনা ও বিনা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সক্রিয় ছিল, বলেন ট্যাং।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের বাসিন্দারা বিশেষভাবে আলফ্রেড-এর গতিপথ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এটি সৃষ্টি হয় এবং রাতারাতি তৃতীয় ক্যাটাগরির শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর ফলে কোরাল সাগরে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাসের ঝাপটা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি উপকূলের দিকে ধেয়ে আসবে কি না বা স্থলভাগে আঘাত হানবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ফিজির উত্তরে ক্রান্তীয় ঝড় ‘রে’ সৃষ্টি হয়। প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিপাতে সেখানে ফলজ গাছের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে, সেরু মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এটি ভানুয়াতুর কাছাকাছি দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহাসাগরের তাপমাত্রা বেড়েছে। এটি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ২০২৪ সালে মহাসাগরের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা না বাড়লেও তীব্র মাত্রার ঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। এসব ঝড় আগের তুলনায় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ঝড় স্থলভাগে ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে ধ্বংসাত্মক প্রভাব আরও তীব্র হচ্ছে।
এসি//