মুখের দুর্গন্ধ একটি প্রচলিত সমস্যা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নানা রকম অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে পারে। এটি বিশেষ করে সামাজিক পরিস্থিতিতে একেবারেই বিরক্তির সৃষ্টি করে।কারণ এই দুর্গন্ধের কারণে অন্যদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করেন যে, শুধুমাত্র দাঁত সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলেই মুখে দুর্গন্ধ হয়, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার পরেও যদি মুখে দুর্গন্ধ থাকে, তবে এর পেছনে আরও কিছু কারণ থাকতে পারে। আসুন জেনে নেয়া যাক মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রধান কারণগুলো এবং তাদের প্রতিকার।
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ:
১. দাঁতের সমস্যা ও ব্যাকটেরিয়া: দাঁতের মধ্যে জমে থাকা খাবারের কণা এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ‘হ্যালিটোসিস’ বলা হয়।
২. পানি কম খাওয়া: পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে মুখে শুষ্কতা তৈরি হয়। এই শুষ্কতা খাবারের কণাগুলোকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে না, যার ফলে দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
৩. ড্রাই মাউথ (মুখ শুষ্কতা): যখন মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে থুতু বা স্যালাইভা তৈরি হয় না, তখন এটি "ড্রাই মাউথ" নামে পরিচিত। এ সময় খাবারের কণা মুখের মধ্যে আটকে গিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তামাক সেবন, কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া, এবং শুষ্ক খাবার খাওয়ার কারণে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
৪. টনসিল স্টোন: টনসিলের মধ্যে খাবার জমে এবং এটি কঠিন হয়ে গেলে টনসিল স্টোন তৈরি হতে পারে, যা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
৫. ভিটামিন ডি এর অভাব: শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে দাঁত শক্ত হতে পারে না, ফলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে এবং মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
৬. সাইনাসের সমস্যা: সাইনাসে সংক্রমণ হলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। সাইনাস থেকে গা dark রঙের মিউকাস বের হলে এটি মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
৭. ভিটামিন সি এর অভাব: ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে, এবং এতে সংক্রমণ হতে পারে। এই ধরনের ক্ষত থেকেও দুর্গন্ধ হতে পারে।
মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধের উপায়:
১. পানি বেশি পান করুন: মুখের শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। এতে মুখ পরিষ্কার থাকে এবং দুর্গন্ধের ঝুঁকি কমে।
২. নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করুন: দুবেলা দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করা এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করা মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করবে।
৩. ভিটামিন ডি এবং সি সমৃদ্ধ খাবার খান: পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন ডি ও সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, শাক-সবজি, সাইট্রাস ফল, আপনার দাঁত এবং মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
৪. টনসিল পরিষ্কার রাখুন: টনসিলের স্টোনের কারণে দুর্গন্ধ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিয়মিত টনসিল পরিষ্কার রাখুন।
৫. পেশাদার চিকিৎসক পরামর্শ নিন: যদি মুখে দুর্গন্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দাঁতের চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত। এছাড়া, সাইনাস সংক্রমণ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে অবহেলা না করে, উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন।
এসকে//