জাতীয়

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কেন বারবার দুর্ঘটনা?

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেনো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পর্যটন রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত ব্যস্ততম এ মহাসড়কটিতে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে ও পঙ্গুত্ববরণ করছে পর্যটক এবং সাধারণ মানুষ। মহাসড়কে লবণবাহী গাড়ি চলাচলসহ তিনটি কারণকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছে ফায়ার সার্ভিস।

লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার রাখাল চন্দ্র রুদ্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান,  ঈদের ছুটিতে তিন দিনে মহাসড়কের এ অংশে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার জন্য আমরা বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছি। লবণপানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হওয়া, বিপজ্জনক বাঁক, অন্য জেলার চালকদের এ সড়কে গাড়ি চালনোর অভিজ্ঞতা না থাকা অন্যতম কারণ।

ঈদযাত্রায় বিগত চার দিনে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৮টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।

চুনতির জাঙ্গালিয়া ট্রাজেডির রেশ না কাটতেই ৩ এপ্রিল রাতে কক্সবাজারের ব্যস্ততম ডলফিন মোড়ে ব্রেক ফেল করা তিশা পরিবহনের বাসচাপায় পর্যটকসহ ৫ জন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে সিএনজি ও অটোরিকশা। এদিন সকালে মালুমঘাট রিংভং, চকরিয়া ও নাপিতখালীতে পৃথক দুর্ঘটনায় পর্যটকবাহী বাস উল্টে অন্তত ৪০ জন কমবেশি আহত হয়েছে। চকরিয়ার পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পট লামার মিরিঞ্জার কাছে বাস উল্টে শিশুসহ ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের সচেতন মহলকে একেবারে ভাবিয়ে তুলছে।

এর আগে ঈদযাত্রায় গত তিন দিনে চট্টগ্রাম মহাসড়কের লোহাগাড়া জাঙ্গালিয়া ঢালা নামক স্থানে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৫ জন নিহত হয়েছে। পৃথক ঘটনায় অন্তত আহত হয়েছে আরও ৩০ জন। টানা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নতি করণের দাবি জোরালো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে মরণফাঁদ থেকে বাঁচতে জনদাবি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ সভা- সমাবেশ করেছে

অন্যদিকে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রুকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী জানান, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা'র অর্থায়নে ১৪৮ কিলোমিটার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে এ কাজ শেষ হলে প্রকল্প প্রস্তুত করে দরপত্র আহবান করা হবে। তার মতে, আগামী ২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে চার লেন সড়ক উন্নতির কাজ শুরু হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ২০ বছরেও এ সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। সরু এই সড়কে আছে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক। সড়কটি চার লেন কিংবা ছয় লেন করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো না। অথচ সরকার এ সড়কের উন্নয়নে এগিয়ে আসছে না।

এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের হাশমতের দোকান, ঠাকুরদীঘি, উপজেলার পদুয়া, লোহাগাড়া শহর, আধুনগর, হাজি রাস্তা, চুনতি, জাঙ্গালিয়া এলাকা, চকরিয়া অংশের ইসলাম নগর ইমাম বুখারী মাদ্রাসা এলাকা, বানিয়ারছড়া ওরি আমগাছ তলা, হারবাং লালব্রীজ এলাকা আজিজ নগর, চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এলাকা, লক্ষ্যারচর জিদ্দা বাজার টার্নিং পয়েন্ট, মালুমঘাটের রিংভং ছগিরশাহকাটা ঢালা, ডুলাহাজারার পাগলিরবিল, খুটাখালী জাতীয় উদ্যান, নাপিত খালী, রামু রাবার বাগান, ঝিলংজার পূর্ব খরুলিয়া, মুক্তারকুল ও কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বার খ্যাত ডলফিন মোড়।

এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় রোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মেহেদী হাসান জানান, চালক স্পিডে গাড়ি চালালে মামলা দিতে নির্দেশনা আছে। বৃহস্পতিবার নির্দেশ অমান্য করে গাড়ি চালানোয় ৭ টি মামলা দিয়েছি। তাছাড়া লবণ পরিবহনের সময় নির্গত পানি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পিচ্ছিল করে তুলছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম