বিনোদন

চার্লি চ্যাপলিনের জন্মদিনে তার জীবনছোঁয়া কিছু উক্তি

বিনোদন ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

চার্লি চ্যাপলিন- এই নামটি শুনলেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে এক অনবদ্য চরিত্র: পরনে ছেঁড়া কোট, ঢিলেঢালা প্যান্ট, পায়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ জুতা, হাতে একটি ছড়ি, ঠোঁটের নিচে ছোট্ট টুথব্রাশ গোঁফ, আর মাথায় কালো ডার্বি হ্যাট। তিনি ছিলেন এক অসাধারণ শিল্পী, যিনি শব্দহীন অভিনয়ে গড়েছিলেন শব্দের চেয়েও গভীর এক ভাষা- ভালোবাসা, কষ্ট আর হাসির ভাষা।

চরম দারিদ্র্য আর শৈশবের নিদারুণ কষ্ট তাকে গড়েছে এক ব্যতিক্রমী জীবনদর্শনে। মাত্র ১২ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি দেখে ফেলেছিলেন জীবনের সেই নির্মম রূপ, যা অনেকেই হয়তো সারাজীবনেও দেখে না।

তবু সমস্ত বেদনা বুকের গভীরে চেপে রেখে তিনি বিশ্বকে দিয়েছেন আনন্দ, আশার আলো। বেদনাকে শিল্পে রূপান্তর করার বিরল ক্ষমতা যার ছিল, সেই চ্যাপলিনের জন্মদিন আজ- ১৬ এপ্রিল। এই দিনে, তারই বলা কিছু অনন্তপ্রাসঙ্গিক ও জীবনঘনিষ্ঠ উক্তি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য, যেগুলো শুধু মনের ভিতরে নয়, জীবনের পথচলাতেও আলো জ্বালাতে পারে।

 

১. প্রতিটা শিশুর মধ্যে প্রতিভা আছে, কিন্তু তার ভেতর থেকে সেটা বের করে আনতে জানতে হয়।

২. জীবন অনেক সুন্দর, যদি তুমি ভয় না পাও।

৩. আয়না হচ্ছে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, কারণ যখন আমি কাঁদি সে তখন হাসে না।

৪. নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে তুমি কখনো রংধনু খুঁজে পাবে না।

৫. হাসি হলো ওষুধ, যা দুঃখ থেকে মুক্তি দেয়।

৬. হাসি ছাড়া একটি দিন মানে সেই দিনটা নষ্ট।

৭. আমার জীবনে অনেক সমস্যা। কিন্তু আমার ঠোঁট তা জানে না বলে সব সময় হাসতে থাকে।

৮. এই পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়, এমনকি আমাদের সমস্যাগুলোও না।

৯. আমি বৃষ্টিতে হাঁটি যাতে কেউ আমার অশ্রু দেখতে না পায়।

১০. আমার দুঃখ-কষ্টগুলো কাউকে কাউকে হাসাতে পারে, কিন্তু আমার হাসি যেন কখনই কাউকে দুঃখ না দেয়।

১১. কাছ থেকে দেখলে জীবন হচ্ছে ট্র্যাজিডি, কিন্তু দূর থেকে দেখলে সেটা কমেডি।

১২. আমরা প্রত্যেকেই একে অন্যকে সাহায্য করতে চাই। মানুষ এমনই, আমরা বেঁচে থাকি অন্যদের আনন্দ দিয়ে, দুঃখ দিয়ে নয়।

১৩. মন খুলে হাসতে চাইলে নিজের দুঃখ-যন্ত্রণাগুলোর সঙ্গে খেলতে শেখো।

১৪. ভালোবাসা দাও, ভালোবাসা ছড়াও।

১৫. জীবন অনেক সুন্দর, এমনকি একটা জেলি ফিশের কাছেও।

১৬. সরলতাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

১৭. তুমি কিসের অর্থ খোঁজো? জীবন হলো একটা আকাঙ্ক্ষা, কোনো অর্থ নয়।

১৮. যেদিন আমি ভালো কোনো কাজ করি সেটাই আমার সবচেয়ে সুখের দিন।

১৯. কৌতুক করা অনেক সিরিয়াস একটা ব্যাপার।

২০. আমি কোনো কিছুতেই বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করি না।

২১. আমি হলাম পুরনো আগাছার মতো। আমাকে যতোই কাটবে, ততই আমি বেড়ে উঠবো।

২২. জ্ঞানী হই বা বোকা, আমাদের প্রত্যেককেই জীবনের সঙ্গে লড়তে হয়।

২৩. আমি যদি কথা বলতাম তাহলে আমি অন্য কৌতুকাভিনেতাদের মতো হয়ে যেতাম।

২৪. সব সত্যের মধ্যেই মিথ্যার একটা বীজ রয়েছে।

২৫. বাস্তবতা দিয়ে চলচ্চিত্র হয় না, চলচ্চিত্র তৈরি হয় কল্পনা দিয়ে।

২৬. আমি রক্ত ঘৃণা করি, অথচ এটা আমার শিরার ভেতরই আছে।

২৭. ধনী হয়ে যাওয়া লোকটাও দারিদ্রতার সময়গুলো নিয়ে স্মৃতিকাতর থাকে, কারণ তখন তার জীবনে স্বাধীনতা ছিলো।

২৮. দিনশেষে সবকিছুই ঠাট্টা।

নিঃশব্দ চলচ্চিত্রের এক কালজয়ী শিল্পী চ্যাপলিন, যিনি শুধু কৌতুকাভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন মানবতার এক অনন্য কথক। নিঃশব্দের পর্দায় হাসির আড়ালে তিনি বলে গেছেন সমাজের নিপীড়িত মানুষের গল্প, তুলে ধরেছেন অন্যায় আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে নির্ভীক প্রতিবাদ।

তার সৃষ্ট কালজয়ী চরিত্র ‘দ্য ট্রাম্প’- বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। টুপি, বাঁকা গোঁফ, ঢিলেঢালা প্যান্ট, বড়জোর একজোড়া বেমানান জুতা আর হাতে বাঁশির মতো ছড়ি- এই সরল-সরল রূপের আড়ালে ছিল গভীর জীবনবোধ আর মানবিকতা। এই চরিত্রটিই হয়ে ওঠে নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রতীক, শিল্পের এক চিরন্তন মুখ।

চ্যাপলিনের অসাধারণ সব সৃষ্টির মধ্যে ‘দ্য কিড’ (১৯২১), ‘সিটি লাইটস’ (১৯৩১), ‘মডার্ন টাইমস’ (১৯৩৬) এবং ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ (১৯৪০)—বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। বিশেষ করে ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’-এ হিটলারের ব্যঙ্গচিত্রে তিনি শুধু অভিনয়ই করেননি, শিল্পের শক্তিতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, সাহসী বার্তা দিয়েছেন বিশ্বকে।

হলিউডের স্বর্ণযুগে তিনি ছিলেন একচ্ছত্র অধিপতি। তার কর্মজীবন ছিল সৃষ্টিশীলতা আর সংগ্রামের এক দুর্লভ মিশেল। শিল্পে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে তিনি পান সম্মানসূচক অস্কার, আর ১৯৭৫ সালে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।

১৯৭৭ সালে সুইজারল্যান্ডে নিঃশব্দেই থেমে যায় এক জীবন্ত কিংবদন্তির জীবন। কিন্তু থামে না তাঁর প্রভাব, থামে না তাঁর শিল্প। আজও তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন- প্রতিটি শিল্পীর মাঝে, প্রতিটি দর্শকের হৃদয়ে।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন চার্লি চ্যাপলিন