আইন-বিচার

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে শিশির মনিরের প্রতিক্রিয়া

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দেওয়া দ্রুত রায়কে বিচার বিভাগের একটি বড় সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। শনিবার (১৭ মে) মাগুরার আদালতে এই মামলার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ দিন সকালেই মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তবে খালাস পান তার স্ত্রী জাহেদা বেগম এবং দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখ।

রায়ের পর শিশুটির মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিটু শেখের ফাঁসির আদেশ হলেও অন্য তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রায় আমরা মেনে নিতে পারছি না। উচ্চ আদালতে যাব।’

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। বিচার শুরুর মাত্র ২১ কার্যদিবসের মধ্যেই শেষ হয় আলোচিত এ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া।

ঘটনার এক মাসের মধ্যে ১৩ এপ্রিল পুলিশ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠন এবং ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে মোট ২৯ জন সাক্ষ্য দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মকুল জানান, মামলার জব্দ তালিকার ১৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে আলামতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তিনটি মেডিকেল রিপোর্টের পাঁচজন চিকিৎসকও সাক্ষ্য দিয়ে রিপোর্টের বৈধতা প্রমাণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘১৬৪ ধারায় দেওয়া হিটু শেখের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিকেল এভিডেন্স ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সাক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’

গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছরের শিশু আছিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরা, পরে ফরিদপুর ও শেষে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ মারা যায় শিশুটি।

এরপর ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ ১৫ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যেখানে তিনি একাই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

ঘটনার পর সারাদেশে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয় বিভিন্ন স্থানে। এমনকি স্থানীয় আইনজীবীরাও এই মামলার আসামিদের কোনো ধরনের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, তারা রায়ের পুরো কপি সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করবেন। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

একদিকে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া বিচার বিভাগের দক্ষতার সাক্ষ্য দিলেও, সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় এখনো অপেক্ষায় আছিয়ার পরিবার।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #শিশু আছিয়া #ধর্ষণ #অ্যাডভোকেট শিশির মনির