আন্তর্জাতিক

‘পানি বন্ধের সাহস যেন কেউ না করে’—ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন করে তুঙ্গে উঠেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)–এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী ভারতের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সোমবার (১৯ মে) একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তানের পানির প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা করা হলে ভারতকে দীর্ঘমেয়াদি ফল ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি সেই সময়টা যেন না আসে। তবে সত্যিই যদি কেউ পাকিস্তানের পানি বন্ধ করার সাহস করে, তাহলে বিশ্ব এর পরিণতি দেখবে এবং আমরা বছরের পর বছর তা মোকাবিলা করব।’

২৪ কোটিরও বেশি মানুষের পানি কখনোই বন্ধ করে রাখা যাবে না উল্লেখ করে আইএসপিআর প্রধান বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি পেশাদার বাহিনী। তারা রাজনৈতিক সরকারের অধীন থেকে দায়িত্ব পালন করে এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’

যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যদিও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ নিয়ে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।

তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদুলুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের পক্ষে আরও দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন আইএসপিআর প্রধান।

তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘ভারতের আধিপত্য মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পাকিস্তান একটি শান্তিপ্রিয় ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র, কিন্তু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা কখনো পিছপা হব না।’

ভারতের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘ভারত যুক্তরাষ্ট্র নয়, আর পাকিস্তান আফগানিস্তান নয়। ভারত ইসরায়েল নয়, আর পাকিস্তান ফিলিস্তিন নয়। শান্তির অর্থ মাথা নত করা নয়। আমাদের বাধা দেওয়া যাবে না, ভয় দেখানো যাবে না।’

জেনারেল চৌধুরী আরও অভিযোগ করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও চরমপন্থার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা একটি ‘বহিঃশত্রু তৈরি’র অপচেষ্টা। তার ভাষায়, “ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টানদের ওপর দমনপীড়ন বেড়েই চলেছে। চরমপন্থা ও ঘৃণা ভারতের ঘরোয়া সমস্যা। এই চাপ ঢাকতেই তারা পাকিস্তানকে টার্গেট করছে।”

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই লক্ষ্যভিত্তিক এবং শুধু ভারতের সামরিক অবকাঠামোর উপর সীমাবদ্ধ। কোনো বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়নি।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’–এর সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তিনি জানান, বিশেষ করে নিষিদ্ধ সংগঠন টিটিপির (তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান) কার্যক্রমে ভারতের মদদ রয়েছে। সম্প্রতি ঝেলম থেকে গ্রেফতার হওয়া এক সন্দেহভাজনের স্বীকারোক্তিতে ভারতের প্রশিক্ষণের তথ্য উঠে এসেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দেয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানও সামরিক অভিযানে জড়িয়ে পড়ে। এরপর চারদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের এমন বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পুরো অঞ্চল তাকিয়ে আছে, দুই প্রতিবেশী শক্তিধর দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

 

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ভারত-পাকিস্তান #আইএসপিআর #সিন্ধু নদী