দেশজুড়ে

হারিয়ে যেতে বসেছে ধরলা ও তিস্তা নদীর দেশীয় মাছ

অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তা নদীসহ আশেপাশের ১৬টি নদীতে এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরতো দেশি মাছ বৈরালী, রুই, কাতলা, টেংরা—এসব মাছ নদীতে পাওয়া যেত হরহামেশা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব মাছ আজ প্রায় হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে বৈরালী মাছ, যা আগে প্রচুর ধরা পড়ত, এখন তা দেখা মেলে খুব কমই।

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষন সংস্থা আই ইউ সি এম বৈরালী মাছকে বিলুপ্তপ্রায় ঘোষণা করে। যদিও স্থানীয়ভাবে গবেষণার মাধ্যমে পুকুরে এই মাছের প্রজননে আংশিক সাফল্য এসেছে, তবুও নদীতে এদের উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। শীত আর গ্রীষ্মকালে কিছুটা মাছ পাওয়া গেলেও বর্ষায় নদী প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়ে।

প্রতিদিন ধরলা ও তিস্তা নদীতে শত শত জেলে জাল ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফলাফল হতাশাজনক। যেসব মাছ পাওয়া যায়, সেগুলোর দামও চড়া। বাজরে বৈরালী বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে, আর অন্যান্য মাছ সাইজভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

এই সংকটের পেছনে বড় কারণ হলো অবৈধ মাছ ধরার পদ্ধতি। কারেন্ট জাল ও ব্যাটারি দিয়ে শক দিয়ে মাছ ধরার ফলে মাছের ডিম ও পোনা নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নদীতে একাধিক বাঁধ, পানির ঘাটতি, অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে।

নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকার। অথচ স্থানীয়ভাবে এসব বন্ধে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ—মাছ প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিকার বন্ধ না হওয়ায় মাছের বিস্তার থেমে যাচ্ছে।

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, একসময় এই অঞ্চলের নদীগুলোতে কমপক্ষে ২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এখন বৈরালী, টাকি, শিং, মাগুর, কৈ, কালবাউশসহ অনেক প্রজাতি প্রায় নেই বললেই চলে। ফুলবাড়ী উপজেলার জেলেরা জানান, সারাদিন জাল টেনেও এখন এক-দেড় কেজি মাছ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবিকার জন্য বাধ্য হয়েই তারা মাছ ধরছেন।

বালারহাট বাজারের মাছ বিক্রেতারাও একই হতাশার কথা জানিয়েছেন। আগে প্রতিদিন কয়েক ডজন কেজি দেশি মাছ সংগ্রহ করা গেলেও এখন গড়ে তিন থেকে পাঁচ কেজির বেশি পাওয়া যায় না। বাজারে এই মাছের দামও তাই বেশি।

ক্রেতারা বলছেন, ছোট পোনামাছ বাজারে উঠছে বেশি দামে। অথচ এই মাছগুলো বড় হতে পারলে পরবর্তীতে বাজারে চাহিদা মেটানো যেত। তারা বলেছেন, ছোট ছোট পোনা মাছে শিকারে মৎস্য বিভাগের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ফুলবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বায়ান্ন টিভিকে বলেন, অবৈধ চায়না জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে এবং আগামী সপ্তাহে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। পোনা মাছ শিকারকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কুড়িগ্রাম #মাছ #তিস্তা