বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তাদের ভোটিং পদ্ধতি খুব শিগগিরই চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারিগরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ভোটিং পদ্ধতি ঠিক করতে নির্দেশনা দেওয়ার পরই গেলো দুই মাস ধরে নানা পর্যালোচনার পর কয়েকটি বিকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে ইসি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে, প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি- এ তিনটি পদ্ধতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এসব পদ্ধতি নিয়ে নানা পর্যালোচনার পর প্রবাসীদের জন্য সরাসরি ভোট চালু করা যায় কিনা সেটিও আসে প্রস্তাবনায়।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে যে সময় আছে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সেই হিসেবে কোথাও পোস্টাল ভোটিং আর যে সব দেশে সুযোগ আছে, সেখানে প্রবাসীদের জন্য সরাসরি ভোটও চালু করা যায়।
বিবিসি বাংলারে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের প্রস্তাবিত চার পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ দিতে ১৫ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে নানা পরামর্শ পাওয়া গেছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অংশীজনদের মতামত বা পরামর্শ পর্যালোচনা করে চলতি মাসের মধ্যেই প্রবাসীদের জন্য ভোটের পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা তাদের রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রক্সি ভোটিংয়ের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশন। প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতিতে প্রবাসী যারা ভোটে দিতে চান, তারা প্রথমে একটি অ্যাপে ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে নিবন্ধন করবেন। তারপর প্রি-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবেন। তার পক্ষে যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, তার এনআইডি ও বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে ওই রেজিস্ট্রেশনের সময়।
যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, তিনি নিজের ভোটও দিতে পারবেন। এটা হবে অনেকটা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র মত বিষয়।
রেজিস্ট্রেশনের পর নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার সঙ্গে জানিয়ে দেবে, কারা কারা প্রক্সি ভোট দেবেন। তাদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকার প্রয়োজন পড়বে না।
অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল প্রক্সি ভোটিং প্রসঙ্গে বলেন, এ পদ্ধতিতে ভোট করতে হলে একজন নাগরিককে দুইটা ভোট দেওয়ার আইন করতে হবে। এ জন্য আমাদের সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে, এটা প্রথম বিষয়।
গেলো এপ্রিলে প্রক্সি ভোটিং নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছে মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এমআইএসটি। সেখানে প্রক্সি ভোটিং সিস্টেমকে কার্যকরী একটি পদ্ধতি হিসেবে ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
এ পদ্ধতিতে প্রবাসীদের জন্য ভোটিং চালু করতে ডিজিটাল ও স্বাক্ষরতা, বাংলাদেশের মিশন অফিসগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সুবিধা বৃদ্ধি ও আইনগত বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এমআইএসটি’র প্রস্তাবনায় এ পদ্ধতিকে অন্য সব পদ্ধতির চেয়ে তুলনামূলক সহজ হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়। যেখানে কী প্রক্রিয়ায় এ ভোট সম্পন্ন হবে, তারও বিস্তারিত রয়েছে।
প্রক্সি ভোটিং প্রবাসীদের জন্য ভাল পদ্ধতি হিসেবে মনে করেন প্রবাসীদের ভোটিংয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. আব্দুল আলীম। তিনি বলেছেন, কিছু দুর্বলতা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি প্রক্সি ভোটিং।
এমআর//