আবারও বন্দুক হামলায় রক্তাক্ত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তর শহর ফিলাডেলফিয়ার ফেয়ারমাউন্ট পার্কে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় সোমবার (২৬ মে) দিবাগত রাতে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন আরও ৯ জন।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে লেমন ড্রাইভের কাছে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মেমোরিয়াল ডে উদ্যাপন উপলক্ষে ফেয়ারমাউন্ট পার্কের স্থানীয়রা রান্না করার জন্য বেরিয়েছিল। ওইসময় হঠাৎ এক বন্দুকধারী এসে তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়।
ফেয়ারমাউন্ট পার্ক বিশ্বের বৃহত্তম নগর উদ্যানগুলির মধ্যে একটি। যা ৯ হাজার ২০০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।
এর আগে, রোববার রাতে সাউথ ক্যারোলাইনার লিটল রিভার এলাকায় এক বন্দুকধারীর হামলায় ১১জন আহত হন। কী কারণে ওই হামলা তা স্পষ্ট নয়। আহতদের অবস্থা সম্পর্কেও সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও তথ্য জানায়নি পুলিশ।
যেসব বন্দুক হামলায় চারজনের বেশি লোক নিহত হন সেটিকে মাস শুটিং বা গণহত্যা বলা হয়। আমেরিকায় অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কাজ করা ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ নামের একটি সংস্থার হিসেবে অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৯২ টি মাস শুটিং হয়েছে। এসব অপকর্মে ৪ হাজার ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৭ হাজার ৯৯২ জন।
গান ভায়োলেন্সের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির ৩৩ কোটি নাগরিকের হাতে ৩৯ কোটি বন্দুক রয়েছে। দেশটিতে আইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার সুযোগ প্রায় অবাধ।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন একারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে। তারা বলছেন, এসব ঘটনার মূল কারণ বিনামূল্যে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার সুবিধা। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠলেও অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের কারণে তা টেকেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে নাগরিকরা আইনত প্রকাশ্যে বা গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারে।দেশটির ১২টি রাজ্য লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ্যে গোপন অস্ত্র বহন করার স্বাধীনতা রয়েছে। ৩০টি রাজ্যে প্রকাশ্যে হ্যান্ডগান বহনের অধিকার রয়েছে।বর্তমানে ৪৫টি রাজ্যে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি রয়েছে। মাত্র সাতটি রাজ্যে মানুষকে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার প্রয়োজনীয়তা দেখাতে হয়। এসব কারণে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা কোনোভাবেই থামছেনা।
বন্দুক সহিংসতা কমানোর আরেকটি ধাপ হলো-আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বন্দুক কেনা-বেচা নিয়ন্ত্রণ করা। সাবেক বাইডেন প্রশাসন কয়েকবার বন্দুকের সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও প্রত্যেকবারই তা ঠেকিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনেটিটিভস এবং উচ্চকক্ষ সিনেটের রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা। একসময় তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন-‘আর কত প্রাণের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র আইন পরিবর্তন আসবে?’
বর্তমানে নিরাপত্তা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের তৎপরতার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকে। সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিলেও হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এমআর//