একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার (২৮ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। এ সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে জোটভুক্ত সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। তারা দাবি করেছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ অভিযোগ তুলেছেন ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। অন্যদিকে দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান বলেছেন, বামপন্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বামপন্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে দুয়োধ্বনি দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তারা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম নগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে ছাত্র ফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ মে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারকে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিলের আয়োজন করে। জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবির ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের’ নামে দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে পরের দিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ছাত্র জোটের প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে আবারও ছাত্রশিবির ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে তাঁদের ওপর হামলা চালান।
চট্টগ্রামে হামলায় ছাত্র ফ্রন্টের নগর শাখার সভাপতি ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চট্টগ্রামের অন্যতম সংগঠক রিপা মজুমদার, চট্টগ্রাম নগরের অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধা শ্রীকান্ত বিশ্বাসসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ছাত্র ফ্রন্ট। বামপন্থী এই ছাত্রসংগঠন বলেছে, নারী আন্দোলনকারীদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিততভাবে ন্যক্কারজনক হামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে একজন নারী আন্দোলনকারীকে যেভাবে লাথি মারা হয়েছে, তা সারা দেশের বিবেকবান মানুষকে গভীরভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। গত দুই দিনের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে যাঁদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জোটের মিছিল চলাকালে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা স্পষ্টতই জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী।
ছাত্র ফ্রন্ট বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে ভিন্নমত ও চিন্তাচর্চার ক্ষেত্র। কিন্তু ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবিরের ন্যক্কারজনক হামলা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছে।
ছাত্র ফ্রন্টের দাবি, শিবিরের সন্ত্রাসসহ সব ধরনের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে ছাত্র ফ্রন্ট মনে করে, ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাস-দখলদারত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলেছিল। সেই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যারা নতুন করে সন্ত্রাসের রাজনীতিতে জড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে।
এসি//