তুরস্ক প্রবাসী পরিচয় দিয়ে করেছেন বিয়ে। এরপরে শ্বশুর বাড়িতে থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের যুবকদের ফাঁদে ফেলে তুরস্ক নেয়ার প্রলোভন দেখান। এভাবে প্রতারক রহিম প্রামাণিক ওরফে আকাশ মোল্লা হাতিয়ে নেন ৩৫ লাখ টাকা।
সোমবার (৩ জুন) রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, চার মাস আগে তুরস্ক প্রবাসী পরিচয়ে বারবাকপুর গ্রামের আলতাফ শেখের মেয়ে তাসলিমা বেগমকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন প্রতারক রহিম প্রামাণিক ওরফে আকাশ মোল্লা। পরে ওই এলাকার যুবকদের তুরস্ক নেয়ার প্রলোভন দেখান তিনি। তুরস্ক যাওয়ার আশায় বারোবাকপুর, পশ্চিম মুলঘর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের ১০ যুবক তার হাতে তুলে দেন প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। কথা ছিল ১৭ জুন তাদের তুরস্ক নিয়ে যাওয়া হবে। তবে গত ১ জুন সকাল থেকেই লাপাত্তা ওই প্রতারক। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল নম্বরটিও।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকার একটি জেনারেটর কোম্পানিতে মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। দুই মাস আগে আকাশ মোল্লার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আকাশ মোল্লা তাকে ১০ লাখ টাকা দিলে তুরস্কে ভালো বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
তিনি আরও জানান, আকাশ তাকে বলেছে প্রথমেই পুরো টাকা দিতে হবে না। প্রথমে ৪ লাখ টাকা দিলেই সে তুরস্কে নিয়ে যাবে। বাকি টাকা তুরস্কে গিয়ে দিলেই হবে। আকাশের কথায় বিশ্বাস করে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ফরিদপুর নিয়ে তার মেডিকেলও করেছে। আগামী ১৭ জুন তাকে তুরস্কে নেয়ার কথা ছিল। কিন্ত ১ জুন সকালে সে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়েছে। তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। এখন তিনি বুঝতে পারছেন ফরিদপুর নিয়ে তার ভুয়া মেডিকেল করা হয়েছে।
প্রতারক আকাশ একই ভাবে অটোচালক জুলহাসের কাছ থেকে আড়াই লাখ, রাজমিস্ত্রীর সহযোগী রুহুল আমিনের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজারসহ ১০ যুবকের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের মোট ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
প্রতারকের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, আকাশ তার সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। সে তার গহনা নিয়ে পালিয়েছে।
বিয়ের ঘটক মোমিন কাজী বলেন, ওই প্রতারক বারবাকপুর গ্রামের শহিদ বেপারীকে ধর্ম বাপ ডাকতো। শহিদের বাড়িতেই সে থাকতো। সে একদিন বলে যে বিয়ে করবে। শহিদও বলে যে বিয়ে দিলে কোনো সমস্যা নেই। পরে আমি তাসলিমার সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেন। এখন শুনছেন আকাশ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। শহিদ এখন দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পালানোর পর ওই প্রতারকের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তার প্রকৃত বাড়ি বারোবাকপুরের পাশের এলাকা মনোসার বটতলায়। তার প্রকৃত নাম রহিম প্রামাণিক। তবে সে এনআইডি কার্ডে আকাশ মোল্লা নাম ব্যবহার করে। এনআইডি কার্ডটি ভুয়া কিনা তা তিনি জানেন না। সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরকম প্রতারণা করে বিয়ে করে এবং টাকা হাতিয়ে নেয় বলে এখন শুনছেন। সে প্রতারনা করে বলে তার বাবা ও পরিবারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
আই/এ