দেশজুড়ে

ভিজিএফ এর তালিকায় দুই হাজার চাকরিজীবী ও স্বচ্ছল ব্যক্তি

কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে হতদরিদ্র জনগণের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফ চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ভিজিএফ (ভাতাদি সহায়তা) তালিকায় দরিদ্রদের নাম বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ব্যক্তি, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক ও চাকরিজীবীদের নাম। এই বিষয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

৮ নং বলদিয়া ইউনিয়নে ৫ হাজার ৭৪৫ জন হতদরিদ্র মানুষের জন্য মোট ৫৭.৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়। তালিকা প্রস্তুত করা হয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের মাধ্যমে, পরে উপজেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে সেই তালিকা অনুমোদন দেয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, এই তালিকায় প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বাস্তবে ভিজিএফ চাল পাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

তালিকায় যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে কিছু সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং চাকুরীজীবী রয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ১১৩৮ নম্বরে বলদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার, ২৫৭ নম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামান, ২৯২১ নম্বরে ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, ২৯৩৯ নম্বরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান এবং ২৯৪৯ নম্বরে সচ্ছল ব্যক্তি আইনুল হক। এসব ব্যক্তি জানাচ্ছেন যে, তারা জানেন না কিভাবে তাদের নাম ভিজিএফ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো।

তালিকার ব্যাপক অনিয়মের কারণে ঈদুল আযহা উপলক্ষে বরাদ্দ করা চাল বিতরণে বাধা দেখা যায়। স্থানীয় সচেতন জনগণের প্রতিবাদে, ব্যবসায়ীরা যে চালের স্লিপ গ্রহণ করে নিয়েছিল, তা বিতরণ করতে পারেনি। ফলে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে পড়ে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম সিলগালা করে রাখা হয় এই চাল।

৬ জুন, ঈদুল আযহার আগের দিন, স্থানীয় হতদরিদ্র নারী-পুরুষেরা সারাদিন ইউনিয়ন পরিষদে দাঁড়িয়ে থেকেও চাল পাননি, কারণ তাদের নাম তালিকায় ছিল না। বেশ কিছু মানুষ অভিযোগ করেছেন, তাদের স্লিপ চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা বিক্রি করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, তালিকায় কিছু ভুল হয়েছে। তবে স্লিপ বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের সময় যে তালিকা ছিল, সেই তালিকাই এবার ব্যবহার করা হয়েছে।  ভুলক্রমে কিছু সচ্ছল ব্যক্তির নাম চলে এসেছে। তবে এসব চাল বিক্রি করা হয়নি।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস জানান, তালিকায় ত্রুটি পাওয়ায় চাল বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে বাকি চাল বিতরণ করা হবে।

বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, ১৮৪০ জন তালিকাভুক্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৮৪০ জনই চাল নিতে আসেননি। এসব ব্যাক্তির নামের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে রেখে সিলগালা করা হয়েছে।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কুড়িগ্রাম #ভিজিএফ