তেহরানে ইসরাইলি বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে শনিবারও তেলআবিবসহ বেশ কয়েকটি শহর লক্ষ্য করে ভয়াবহ সিরিজ হামলা চালাচ্ছে ইরান। শনিবার রাতে শুরু হওয়া এই অভিযানটি ‘ইয়া আলী ইবনে আবু তালিব’ নামে পরিচালিত হয়। যেটি ছিল শিয়া মুসলমানদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসবগুলোর অন্যতম ঈদ আল গাদীর সাথে সমন্বিত।
শনিবার(১৪ জুন) রাতে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয় দেশটি। ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস- আইআরজিসির দাবি, এটি ছিল দখলকৃত অঞ্চলে তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ভোরের আলো ফুটতেই সেই ক্ষত দৃশ্যমান হচ্ছে। কয়েক দশক পর বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে নতুন এক ইসরাইলকে। যে গাজা উপত্যাকাকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেছে ইসরাইল, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যেনো একই ছবি এখন ইহুদিবাদী দেশটির।
ইরানে হামলার আগে ইসরাইলে মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাডের সরবরাহ বাড়িয়েছিল বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের ছিল অত্যাধুণিক ও সুপারসনিক মিজাইল বিধ্বংসী ব্যবস্থা আয়রন ডোম ও ডেভিড’স স্লিং। তারপরও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে তেলঅবিবকে রক্ষা করত পারেনি ইসরাইল। তাইতো মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন- কী ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ইরান ছুড়েছিল যার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে বাঘ আর সুপার পাওয়ার মনে করা ইসরাইলের অহঙ্কার মাটির সঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো?
ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরাইলের রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহরে নজিরবিহীন হামলায় ইরান ব্যবহার করেছে ‘ইমাদ, গাদ ও খাইবার শেকান নামের আধুনিক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। যাদের আঘাতে মাটির সাথে মিশে গেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ও বিমান ঘাঁটি।
ইসরাইলে হামলায় অংশ নেওয়া অন্যতম প্রধান ক্ষেপণাস্ত্রের নাম হচ্ছে গাদর। ২০০৩ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রটি হচ্ছে শাহাব-৩ ঘরানার মধ্যপাল্লার। ২০০৫ সালে আধুনিকীকরণ করা এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তিন ধরণের।গাদর-এস, গাদর-এইচ ও গাদর-এফ। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভূলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।ওজন ও জ্বালানি ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এর নির্ভুলতা ও দূরত্ব বাড়ানো হয়েছে।
ইমাদ হচ্ছে গাদর ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিক ও নির্ভুল ওয়রহেডযুক্ত সংস্করণ। এটি প্রবেশ করার পর দিক ও গতি নিয়ন্ত্রন করতে পারে, যা লক্ষ্যবস্তুতে আরও নির্ভুল আঘাত হানতে সহায়তা করে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সাড়ে ১৫ মিটার লম্বা ও ওজন প্রায় এক হাজার ৭৫০ কেজিতে পৌঁছেছে। এর পাল্লা রয়েছে এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ইসরাইলিদের অহঙ্কার হিসেবে পরিচিত তাদের অন্যতম শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রণ ডোমকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে প্রতিরক্ষা দপ্তর তছনছ করে দেওয়া ইরানের তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি হলো খাইবার শেকান। মধ্যপাল্লার ও উচ্চ নির্ভুলতা সম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্রটি এক হাজার ৪৫০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
এটি ইসরাইলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অ্যারো-৩ কে অল্পতেই এড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের উড়ন্ত বস্তুকে লক্ষ্যবস্তু করে ধ্বংস করতে সক্ষম ইসরাইলের ডেভিড’স স্লিংকেও এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে ইরানি মিজাইল খাইবার শেকান।
এমআর//