লাইফস্টাইল

ফোন হাতে ঘুম আসে না, বই হাতে বসলেই ঘুম!

বায়ান্ন লাইফস্টাইল ডেস্ক

আজকের যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত ফোনের স্ক্রিনে সোশ্যাল মিডিয়া, গেম, সিনেমা ইত্যাদি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে অনেকেই দাবি করেন, যখন পড়তে বসেন, তখন অদ্ভুতভাবে ঘুম এসে যায়। তবে যখন ফোন হাতে নেওয়া হয়, তখন ঘুম আসতে পারে না। এটি বর্তমানে অনেক মানুষের অভিজ্ঞতা। তবে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ফোনের স্ক্রিনে সময় কাটানো মস্তিষ্ককে এতটাই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে যে পড়াশোনা করার সময় মাথায় ঘুমের অনুভূতি চলে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোনের স্ক্রিন এবং ঘুমের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানো আমাদের মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ঘুম চক্রকে ব্যাহত করতে পারে।  

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. ডেভিড ক্লিন বলেছেন, ফোনের স্ক্রিন থেকে বের হওয়া ব্লু লাইট মস্তিষ্কের পাইনাল গ্রন্থি (যা আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে) কার্যকরভাবে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আর এর ফলে ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে যখন পড়তে বসেন তখন মস্তিষ্কের চাপ এবং শারীরিক অবস্থানও ঘুমের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, পড়তে গিয়ে যদি শারীরিকভাবে আরামদায়ক পরিবেশ না থাকে,যেমন বিছানায় বা সোফায় বসে পড়া। তবে মস্তিষ্ক খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং ঘুম আসতে শুরু করবে।

এ বিষয়ে একজন ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী ড. এমিলি ওয়াটসন বলেছেন, যখন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করি, তখন মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। যদি আমরা বিরতি না নেই বা শরীরের শিথিল অবস্থানে থাকি, তখন মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে ঘুমের অনুভূতি আসতে পারে। আর এই ঘুমের সমস্যা মোকাবেলা করতে বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ সমাধানও প্রস্তাব করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ফোনের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আনা এবং পড়াশোনার সময় সঠিক পরিবেশ তৈরি করলে ঘুমের প্রবণতা কমে যেতে পারে। বিশেষত রাতে ফোন বন্ধ রাখা এবং পড়াশোনার জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করা উচিত, যেখানে আরামদায়ক হলেও ঘুমের অনুভূতি আসবে না।

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ ডিসঅর্ডার বিশেষজ্ঞ ড. সারা নেভেল বলেছেন, ঘুমের সমস্যা কাটাতে আমাদের মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক চক্রের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ফোনের স্ক্রিন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার কমিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হলে ঘুমের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

তবে কিছু মনোবিজ্ঞানী এবং স্লিপ বিশেষজ্ঞ এই সমস্যাটিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেন। 

যুক্তরাজ্য থেকে একজন নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. হেনরি ক্লার্ক জানান, যদি আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং কিছু মনোযোগী ব্রেক নেই,তবে ফোন এবং প্রযুক্তি আমাদের পড়াশোনায় সহায়ক হতে পারে, এর মধ্যে নেতিবাচক কিছু নেই। তবে সেটা হতে হবে নিয়ন্ত্রিত এবং সঠিকভাবে ব্যবহৃত।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, আমরা যদি পড়াশোনা করার সময় কিছু সহজ নিয়ম অনুসরণ করি, যেমন ফোনের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, প্রতিদিন কিছু সময় বিরতি নেওয়া এবং পড়ার জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করা, তবে পড়াশোনা ও ঘুমের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।

তাছাড়া ড. সারা নেভেল আরও বলেছেন, প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এবং একাগ্রতা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে আমাদের মনোযোগকে বিভ্রান্ত না করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।

ফোন এবং পড়াশোনার সময় ঘুমের অনুভূতি আসার সমস্যা এখন প্রায় সকলেই অনুভব করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যাটি সঠিকভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব। সঠিক অভ্যাস, প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু সহজ সমাধান গ্রহণ করলে, আমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে এবং ঘুমের প্রবণতা কমাতে সক্ষম হবো।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ফোন #বই