আজকাল অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পরেও তাদের শেখা বিষয়গুলো তারা মনে রাখতে পারে না। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়ই দেখা যায়, এবং অনেক শিক্ষার্থী এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তবে গবেষকরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য নানা কারণ এবং উপায় তুলে ধরেছেন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পড়াশোনার সময় যদি মনোযোগের অভাব থাকে অথবা মস্তিষ্কে অতিরিক্ত বিভ্রান্তি থাকে, তবে সেই তথ্য মস্তিষ্কে সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. টিমোথি লি বলেন, মস্তিষ্ক এক সাথে অনেক কাজ করতে পারে না। তাই যখন আমাদের মনোযোগ একত্রিত থাকে না, তখন পড়া তথ্য মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
তাছাড়া যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ড. রবার্ট ক্যারিও জানান, পড়ার সময় যদি মনোযোগের অভাব থাকে, তবে সেই তথ্য মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে ঢুকতে পারে না এবং তা দ্রুত ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যেকারণে পড়ার বিষয়গুলো মনে থাকে না :
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান উপাদান থাকে। যেমন:
মনোযোগের মাত্রা:
যদি পড়াশোনার সময় মনোযোগ কম থাকে তবে তথ্য মস্তিষ্কে দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে না।
পুনরাবৃত্তি:
একবার পড়ার পর যদি সেই বিষয়টি পুনরায় না পড়ে তবে সেই তথ্য সহজেই ভুলে যেতে পারি।
মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া:
যখন আমরা পড়ি মস্তিষ্কে নিউরনগুলোর সংযোগ স্থাপিত হয়। নিয়মিত পুনরাবৃত্তি না হলে এই সংযোগ মুছে যেতে পারে।
যেভাবে স্মৃতি বৃদ্ধি করা যায় :
গবেষণায় দেখা গেছে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে:
বিরতির মাধ্যমে পড়াশোনা:
একটানা দীর্ঘ সময় পড়ার পরিবর্তে, ২০ মিনিট পর পর ৫ মিনিটের বিরতি নেয়া মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এর ড. কেরি মফির বলেছেন, বিরতি দিয়ে পড়ার সময় মস্তিষ্ক তথ্য আরও ভালোভাবে ধারণ করতে পারে।
মেমোরি প্যালেস মেথড:
এটি এমন একটি কৌশল যেখানে আপনি পড়া বিষয়গুলো কল্পনা করা স্থান বা দৃশ্যের মধ্যে সাজিয়ে রাখতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি ড. অ্যালান সাউথ বলেছেন, মস্তিষ্ক এমনভাবে তথ্য ধারণ করে যা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত।
ঘুম এবং খাদ্য :
অপর্যাপ্ত ঘুম এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসও আমাদের স্মৃতিকে দুর্বল করে দিতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ড. প্যাট্রিক সুইন বলেন, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক পুরানো তথ্য পুনঃপ্রক্রিয়া করে এবং নতুন তথ্য সঞ্চিত করে।
পুষ্টিকর খাবার যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং হেলদি ফ্যাটস মস্তিষ্কের সেল রিনিউয়াল প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা সমস্যার সমাধানে যা বলছেন :
মনোযোগ এবং পুনরাবৃত্তি:
ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এর ড. কেরি মফির পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিদিন ২০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিট বিরতি নিলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
ঘুম এবং শরীরের যত্ন:
গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ড. স্যামুয়েল পার্কস বলেন, ঘুমের গুরুত্ব অতুলনীয়। কারণ ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম হয়।
পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব, পুনরাবৃত্তির অভাব, এবং ঘুমের অভাব আমাদের স্মৃতিকে দুর্বল করে তোলে। তবে নিয়মিত পড়াশোনা, যথাযথ ঘুম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে স্মৃতিশক্তি সহজেই উন্নত করা সম্ভব।
এসকে//