দেশজুড়ে

ভরা বর্ষায় নেই বৃষ্টি, চরম খরায় বিপাকে আমন চাষিরা

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ভরা বর্ষাকালেও খরা। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমন চাষিরা।

অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি

চলছে আষাঢ় মাস। বর্ষার ভরা মৌসুম। বর্ষাকালের মাঝামাঝি সময়েও বৃষ্টির দেখা নেই কুড়িগ্রামে। চারপাশে শুধুই রোদের প্রখরতা। খরার কারণে শুকিয়ে গেছে আমন ধানের জমি। সময়মতো হাল চাষ করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন জেলার হাজারো কৃষক।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে একসময় পানি জমে থাকতো, এখন সেখানে ধুলোর আস্তরণ। ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে জমির মাটি। কয়েকটি নিচু এলাকায় কিছু কৃষক শ্যালো মেশিন ও সেচের পানি ব্যবহার করে ধান রোপণের চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশ জমি এখনও অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

কুরুষাফেরুষা গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম বলেন, ‘আষাঢ় মাস শেষের পথে, কিন্তু এখনো মাঠে হাল দিতে পারিনি। আগেই বৃষ্টি হলে জমি প্রস্তুত করা যেত, এখন সব পরিকল্পনা আটকে গেছে।’

শৈলান চন্দ্র রায়ও একই অভিযোগ করেন, ‘বীজতলা তৈরি হয়ে গেছে, কিন্তু রোপণের মতো জমি তৈরি করতে পারছি না পানির অভাবে।’

ভাঙ্গামোড়ের কার্তিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমন ধানের চাষাবাদে জমি হাল করে অন্তত ১৫ দিন রেখে দিতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুই করতে পারিনি। যদি দুই-এক দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হয়, তাহলে বাধ্য হয়েই সেচ বা শ্যালো মেশিনে চাষ করতে হবে। এতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে।’

বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক শংকর পাল জানান, ‘বীজতলায় ধান বপন করেছি সেচের পানি ব্যবহার করে। গত কয়েকদিনে একটু মেঘ হলেও ভারী বৃষ্টি হয়নি। আমনের জমিগুলো পানির জন্য অপেক্ষা করছে। আগামী সপ্তাহেও যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বিগত কিছুদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সামনের ২৪ ঘণ্টায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও ১৩ ও ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।’

রাজারহাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, ‘এ বছর ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে, যেখানে সেচ সুবিধা রয়েছে। যদি কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হয়, তাহলে কৃষকরা দ্রুত আমনের চাষ শুরু করতে পারবেন। আর বৃষ্টি না হলে কৃষকদের বিকল্প হিসেবে সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে চাষে উৎসাহিত করা হবে।’

কৃষি বিভাগ আশা করছেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর বৃষ্টিপাত শুরু হলেই রোপা আমন চাষাবাদ ব্যাপক পরিমাণে শুরু হবে। 

এরপরও যদি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হয়। সেক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ সঠিক সময়ে সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে রোপা আমন ধান রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হবে। 

 

এমএ//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কৃষি #কুড়িগ্রাম #বৃষ্টি #আষাঢ় #বর্ষা #ধান #ধান চাষ\