সন্তান- আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় উপহার, সবচেয়ে বড় আমানত। প্রতিটি মা-বাবার হৃদয়ের গভীর প্রার্থনা থাকে—আমার সন্তান যেন থাকে সুরক্ষিত, ভালো থাকে, কেবল দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও যেন সে মুক্তির পথ পায়।
আমরা তাদের জন্য খাবার কিনি, ভালো পোশাক দেই, ভালো স্কুলে ভর্তি করি। কিন্তু আত্মিক নিরাপত্তা? শয়তানের ধোঁকা আর অপচিন্তাধারার ফাঁদ থেকে বাঁচার দোয়া—এগুলো কি আমরা তাদের ঝুলিতে যোগ করি?
ইসলাম আমাদের শেখায়, সন্তানের কেবল দেহের নয়- তার আত্মারও যত্ন নিতে হবে। শয়তানের প্রভাব, কু-সংগঠন, ভ্রান্ত পথ থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো দোয়া।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা সন্তানের নাম ধরে আল্লাহর কাছে কিছু বিশেষ দোয়া পড়া- এ যেন এক অলিখিত রক্ষাকবচ। মা-বাবার মুখ থেকে উচ্চারিত সেই দোয়া আল্লাহর কাছে সরাসরি পৌঁছে যায়, সন্তানের চারপাশে তৈরি করে এক অদৃশ্য নিরাপত্তার চাদর।
সন্তানের নিরাপত্তায় নবীজির শেখানো দোয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) শিশুদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বানিন ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিল লাম্মাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি। (সহিহ বুখারি: ৩৩৭১)
অথবা সংক্ষেপে এই দোয়াও করতে পারেন-
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের আশ্রয় নিচ্ছি, তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে। (সহিহ মুসলিম: ২৭০৮)
এই দোয়াগুলো প্রতিদিন সকালে ও রাতে সন্তানের মাথায় হাত রেখে অথবা দূর থেকেও পড়ে ফুঁ দিয়ে পড়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত আমল
সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস- এই তিনটি সূরা শিশুর আত্মা ও শরীরকে শয়তানি প্রভাব, হিংসা, বদনজর আর অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করে বলে হাদিসে এসেছে। প্রতিদিন এই তিনটি সূরা পড়ে সন্তানের মাথায়, বুকে, হাত-পায়ে আলতো ফুঁক দিন। এটিই হতে পারে তার জীবনের সবচেয়ে মজবুত নিরাপত্তাবলয়।
শুধু দোয়া নয়- সন্তানকে শিখিয়ে দিন নামাজের আদব, রাসূল (সা.)-এর সুন্নত, ভালো-মন্দের পার্থক্য। ওর ছোট ছোট অভ্যাসগুলো যেন গড়ে উঠে কোরআন আর হাদিসের ছায়ায়।
তবে এটাও মনে রাখবেন- আধ্যাত্মিক দোয়ার পাশাপাশি সন্তান যেন শারীরিকভাবে নিরাপদ থাকে, সেটা নিশ্চিত করাও আপনার দায়িত্ব। তাই আপনি যখন বলেন, “আমার সন্তান আল্লাহর হেফাজতে থাকুক”- তখন তার মানে দাঁড়ায়: আপনি তার জন্য দোয়া করছেন, আবার দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবেও পাশে আছেন।
প্রতিদিন যদি এমনভাবে সন্তানের ওপর আল্লাহর রহমত কামনা করেন—তবে ইনশাআল্লাহ, তার পথ হবে আলোয় ভরা, বিপদমুক্ত এবং বরকতময়।