অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে করে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ফ্লাইটটি রাত ১টা ৪০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে।
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূস ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। এ সফরে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। তার ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক বছরের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণ-আন্দোলনের প্রত্যাশা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পাঁচজন রাজনীতিক। তারা হলেন— বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং একই দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হবেন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকিবুর রহমান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এটি জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রথমবারের মতো এমন একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
এই বৈঠক থেকে কার্যকর সমাধান উদ্ভাবনের জন্য গত মাসে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন পেয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ২৫ সেপ্টেম্বর যুবকদের জন্য কর্মপরিকল্পনার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেবেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরবেন। ভাষণে তিনি শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, নিরাপদ অভিবাসন, অবৈধ অর্থপাচার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়ও তুলে ধরবেন।
সফরকালে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, পিসবিল্ডিং কমিশন মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক, ‘জি-৭৭ ও চীন’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, নারী-শান্তি ও নিরাপত্তা ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় সভা, বিমসটেক, সিকা এবং এলডিসি মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এসি//