আমি এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্পষ্টভাবে বলছি যে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটাই ব্রিটিশ জনগণের আকাঙ্ক্ষা। ঠিক এভাবেই রোববার (২২ সেপ্টেম্বর), যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এই পদক্ষেপকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সম্ভাবনা এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে ‘জীবিত রাখার’ জন্য অপরিহার্য বলে বর্ণনা করেছেন।
স্টারমার বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে চলমান বিপদের মধ্যে, আমরা শান্তির সম্ভাবনা এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানে কাজ করছি। এর মানে হলো, একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ইসরায়েল। যার পাশে একটি সক্ষম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে। তবে বর্তমানে, আমাদের কাছে কিছুই নেই। সহিংসতা এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্তভাবে সাধারণ ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি মানুষ শান্তিতে বসবাসের অধিকার রাখে। এটাই চায় ব্রিটিশ জনগণ।
৭ অক্টোবরের বর্বর হামলার প্রসঙ্গে স্টারমার বলেন, “প্রায় দুই বছর পরও, হামাসের সন্ত্রাসীরা এখনো বিদেশি বন্দীদের আটকে রেখেছে। সাম্প্রতিক ছবি গুলোতে তাদের দুর্দশা এবং অপুষ্ট দেখা গেছে। হামাস নিহতদের সব মৃতদেহ দিতেও অস্বীকার করেছে।”
তিনি বলেন, “হামাসের কাছে বন্দীদের পরিবারের সাথে আমি দেখা করেছি। প্রতিদিনই তাদের যন্ত্রণা ভোগ করছে। একারনে ইসরায়েল এবং যুক্তরাজ্যের মানুষ গভীরভাবে ব্যাথিত। বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি পাওয়া উচিত। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”
হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, “হামাস একটি নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী সংগঠন। আমাদের দুটি রাষ্ট্রের সমাধান তাদের ঘৃণ্য দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দুই রাষ্ট্র ব্যাবস্থা হামাসের জন্য পুরস্কার নয়। এটি হলে হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। তাদের কোনো সরকারী ভূমিকা বা নিরাপত্তায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।”
তিনি আরও জানান, “আমরা ইতিমধ্যে হামাসকে নিষিদ্ধ করেছি। হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। আরও কঠোর পদক্ষেপ নিবো। আমি আগামী সপ্তাহে হামাসের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নির্দেশ দিয়েছি।”
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্টারমার বলেন, “গাজার উপর ইসরায়েলের নিরলস বোমাবর্ষণ এবং মানবিক সংকটের কারণে হাজার হাজার মানুষ মরেছে। আমি ইসরায়েলি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, সীমান্তে অগ্রহণযোগ্য বিধিনিষেধ তুলে নিন। নিষ্ঠুর কৌশল বন্ধ করুন। মানবিক সাহায্য জোরদার করুন।”
মানবিক সহায়তা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রথম ধাপে অসুস্থ এবং আহত শিশুদের যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্য এনেছি। যেখানে তাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের মানবিক সহায়তা বাড়িয়েছি। তবে এখনও পর্যাপ্ত সাহায্য পৌছাচ্ছে না। আমরা আবারও ইসরায়েল সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, সীমান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিন, নিষ্ঠুর কৌশল বন্ধ করুন । সেখানে সাহায্য পৌছাতে দিন।”
স্টারমার আরো বলেন, “হামাসের কার্যকলাপ, ইসরায়েল সরকারের সংঘাত বাড়ানো এবং পশ্চিম তীরে বসতিস্থাপন নির্মাণের কারনে, দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আশা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা সেই আলো নিভে যেতে দিতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই অঞ্চল এবং বিশ্বে জনমত সৃষ্টিতে কাজ করছি। এমন পরিকল্পনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গাজায় যুদ্ধবিরতি থেকে দুই-রাষ্ট্র গঠন আলোচনা হবে”।
স্টারমার ঘোষণা করেন, “আজ, আমি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, শান্তির এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আশা পুনর্জীবিত করতে। যুক্তরাজ্য সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। আমরা ৭৫ বছর আগে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে একটি ইহুদি জাতির ভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম। আজ, আমরা ১৫০টিরও বেশি দেশের সাথে যোগ দিলাম। যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি জনগণের উন্নত শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য এটি একটি প্রতিশ্রুতি ’।
আমি জানি, এই সংঘাতটি কতটা গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে। আমরা আমাদের রাস্তায়, আমাদের স্কুলে, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারদের সাথে কথাবার্তা বলেছি। দেখেছি এটি বিভেদ সৃষ্টি করেছে। কিছু মানুষ এটি ঘৃণা এবং ভীতি ছড়াচ্ছে। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়। শুধু ঘৃণা করলেই হবে না। বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আরও শক্তভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সবাইকে এক হয়ে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হবে। বন্দীদের মুক্তি দিয়ে সহিংসতার অবসান করে দুই-রাষ্ট্র সমাধানই সব পক্ষের জন্য শান্তি এবং নিরাপদ।
এভাবেই নিজের বক্তব্য শেষ করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করবে।”