জাতীয়

আমরা বিদায়ী সরকার আর রাজনীতিবিদরা আগামীর সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতিসংঘে আসার সময় আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। কারণ তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না। তাই আমরা উনাদের নিয়ে এসেছি একসঙ্গে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ করে দিচ্ছি। আমরা বিদায়ী সরকার আর তারা আগামীর সরকার।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিজামি গঞ্জাভি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (এনজিআইসি) সহসভাপতি ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল প্রধান উপফদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাকে এমন একটা ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, সেটা কোনও দিন কল্পনাও করিনি। এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল যে নাবলার সুযোগ ছিল না। অনেক লোক তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে। তার বিনিময়ে দেশ মুক্ত হয়েছে। দেশে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা এবং তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়ার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। এটা কোনও সুসংগঠিত বিপ্লব ছিল না। এটি বিগত ১০ বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে তারা আর সহ্য করতে পারছিল না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের ইচ্ছা পূরণ এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। এটা একটা কঠিন কাজ। তবুও আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে কাজ হবে এবং আমরা তার চেষ্টা প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাব। এর মাধ্যমে তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়, এটাকে তারা নাম দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ

উচ্চপর্যায়ের এই দলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিভ ও পেতার স্তোইয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক রপ্রেসিডেন্ট ম্লাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।

 এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, একাধিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি-এর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা।

 নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও আজীবন দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা আপনার পাশে আছি।

তাঁরা উল্লেখ করেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি, শোষণ ও কু-শাসনের কারণে দেশটি এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

বিভিন্ন নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে জানাবেন।

 

প্রসঙ্গত,  প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে শুক্রবার নিউইয়র্কে তাঁর হোটেল স্যুইটে একত্রিত হন এসব প্রভাবশালী নেতা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #প্রধান উপদেষ্টা