দেশজুড়ে

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা

‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না’- নিহত কালামের সন্তান

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছেলেটির বয়স পাঁচ বছর আর মেয়েটির বয়স মাত্র তিন। এই বয়সেই পিতৃহারা হয়েছে রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে নিহত আবুল কালামের দুই সন্তান।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তার স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারেনি, তাদের বাবা আর ফিরবে না। ওরা বলে, ‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না।’ আমি কীভাবে ওদের বোঝাই যে, ওদের বাবা আর কখনও জাগবে না! আবুল কালামই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা, এখন আমি সন্তানদের নিয়ে একেবারে দিশেহারা হয়ে গেছি।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে শরীয়তপুরের নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে আবুল কালামের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে রোববার গভীর রাতে নিজ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে তার মরদেহ পৌঁছায়। দাফন শেষে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ।

নিহত মি. কালামের পরিবারের সদস্যরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। পরিবার নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে। ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত করতেন।

প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে আসেন আবুল কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট এলাকায় যান। সেখানেই মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে তার মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি চোকদার জানান, দুপুরে আমরা টিভিতে খবর দেখি মেট্রোরেলের নিচে একজন মারা গেছে। পরে যখন ফেসবুকে একটা পাসপোর্টের ছবি দেখি তখনই আমরা বুঝতে পারি আমাদের কালাম মারা গেছে। রোববার দুপুরে মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই কথা বলেছিলেন পরিবারের সাথে।

তিনি জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠী এলাকার মৃত আব্দুল জলিল চোকিদারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। ছোটবেলায় বাবা মা হারান তিনি।  চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট, বেড়ে ওঠেন তাদের কাছেই। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ (৫) ও সুরাইয়া আক্তারকে (৩) নিয়ে বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায়। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করতেন।

নিহত আবুল কালামের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি চোকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেল। এখন এর দায় কে নেবে? 

কালামের মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এমন দুর্ঘটনার প্রাণহানির ঘটনায় শোকে স্তব্ধ পরিবারসহ এলাকার বাসিন্দারা।

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #মেট্রোরেল দুর্ঘটনা #আবুল কালাম