ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শীতকালীন বৃষ্টি ও তীব্র ঠান্ডা নতুন করে ভয়াবহ দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষ এখন ছেঁড়া-ফাটা তাঁবু ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘদিনের দখলদার ইসরাইলের বর্বর হামলায় ঘরবাড়ি হারানো এসব মানুষের জন্য প্রকৃতির এই প্রতিকূলতা যেন আরেক দফা দুর্যোগ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) গাজার ওপর দিয়ে শক্তিশালী নিম্নচাপ বয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় অনেক এলাকায় তাঁবু ভেসে গেছে, আশ্রয়কেন্দ্র প্লাবিত হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে এটি তৃতীয় বড় ধরনের নিম্নচাপ, আর সামনে আরও একটি শক্তিশালী ঝড় আসার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পরিবার ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকেই তাঁবুতে বসবাস করছে। প্রায় পুরো যুদ্ধকালজুড়েই তারা স্থায়ী কোনো আশ্রয় পায়নি। আসন্ন বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে ভারী বর্ষণে গাজার বহু তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয় ডুবে যায়। কারণ, উপত্যকার অধিকাংশ স্থাপনা আগেই দখলদয়ার বাহিনীর বর্বর হামলায় ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু ডিসেম্বর মাসেই ঠান্ডাজনিত কারণে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। প্রবল শীত ও ভেজা পরিবেশে হাইপোথার্মিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু ভবন ধসে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গাজা পোর্ট এলাকায় সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মকর্তা ইব্রাহিম আবু আল-রিশ জানান, ঝড়ের মধ্যে ভঙ্গুর তাঁবুতে থাকা মানুষেরা সাহায্যের জন্য তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্লাস্টিক দিয়ে ডুবে যাওয়া তাঁবু ঢাকার চেষ্টা করছি, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।”
আল জাজিরার প্রতিবেদক ইব্রাহিম আল খলিলি বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে শীতের প্রকোপ বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টিতে কাদায় তলিয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা, একই কষ্ট বারবার ফিরে আসছে।
মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত আরও ত্রাণ ও আশ্রয় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া জরুরি।
এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে। সেখানে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। গেল ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি এখনো আংশিকভাবে টিকে আছে। যদিও শতাধিকবার ইসইরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪১৪ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ হাজার ১৪২ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৬৭৯টি মরদেহ।
সর্বশেষ হিসাবে, দখলদার বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার পর গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৭১ হাজার ২৬৬ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এমএ//