আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

ভারতে করোনার রেকর্ড, একদিনে আক্রান্ত দু’লাখ ১৭ হাজার

ভারতে করোনার রেকর্ড, একদিনে আক্রান্ত দু’লাখ ১৭ হাজার

ভারতে গেল ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দুই লাখ। আজ শুক্রবার পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখের বেশি।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছে এক হাজার ১৮৫ জন। গেল বছর সংক্রমণ শুরুর পর থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের উদ্বৃতি দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ভারতের বড় শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। গেল বুধবার রাত থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশিরভাগ শিল্প, ব্যবসা ও জনসমাগম বন্ধ করা হয়েছে। ১৫ দিনের জন্য মানুষের অবাধ চলাচল সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তবে চালু রয়েছে ট্রেন ও উড়োজাহাজ পরিষেবা।

ভারতীয় গণমাধ্যগুলো জানায়, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং আরও কয়েকটি রাজ্যের হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। কয়েকটি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের শ্মশান ও সমাধিস্থলগুলোতে শেষকৃত্যের জন্য লাশের সংখ্যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

করোনা শনাক্তে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত এবং মৃত্যুর দিক থেকে রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। তবে দেশটির এক দশমিক চার বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ করোনা শনাক্ত পরীক্ষার কার্যক্রম সীমিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, সাম্প্রতিক স্থানীয় ও রাজ্য নির্বাচনের বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ এবং হিন্দুদের বড় উৎসব কুম্ভমেলায় হরিদ্বারের গঙ্গা নদীতে স্নান করা করোনা সংক্রমণ বিস্তারের বড় কারণ ছিল।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতে করোনার ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেইন সংক্রমিত হয়েছে ১০টি রাজ্যে। এই প্রজাতির ভাইরাসে রয়েছে দুটি প্রজাতির করোনাভাইরাসের মিশ্রণ। এই তৃতীয় প্রজাতি তৈরি হয়েছে ই৪৮৪কিউ ও এল৪২৪আর ভাইরাসের মিশ্রণে। দিল্লিতে ব্রিটেনের করোনা প্রজাতি ও এই জাতীয় করোনা প্রজাতি যৌথভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ভাইরাসটি ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশেও।

পাঞ্জাবে করোনার নতুন ঢেউয়ে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশের শরীরে ব্রিটেনের করোনা স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। কিন্তু মহারাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে নতুন প্রজাতির সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। হিসাব অনুসারে, ৬০ শতাংশ আক্রান্তই সংক্রমিত হয়েছে দুই ভাইরাসের প্রজাতি থেকে তৈরি তৃতীয় ভাইরাসের মাধ্যমে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঁচ লেগেছে শ্মশান ও কবরস্থানে। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রতিদিন মৃত্যু বাড়ায় শ্মশান, কবরস্থানে লাইন বাড়ছে। দিল্লির সবচেয়ে বড় শ্মশান নিগম্বোধ ঘাটে সৎকারের জন্য কয়েকদিন ধরে দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। অনেকে ৬-৭টা ঘণ্টা অপেক্ষা করে স্বজনদের মরদেহ দাহ করার সুযোগ পাচ্ছে না।

এনডিটিভি জানিয়েছে, বর্তমান হারে লাশ এলে কিছু দিন পরই কবর দেওয়ার জায়গা শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে দিল্লির এক কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। আগে দিনে ১-২টা করে মরদেহ আসত। এখন দিনে ১৭-১৮টা করে আসছে। শেষ পাঁচ দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আর ৯০ জনকে কবর দেওয়ার মতো জায়গা রয়েছে।

এমনকি, বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালের মর্গেও মরদেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না। মরদেহ প্রকাশ্যে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে।

গেল বছর নভেম্বর থেকে সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী হলেও চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ আবারও বাড়তে শুরু করে। এক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এক লাখের বেশি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছে, ভারতে করোনা বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের উদাসীনতাই সংক্রমণের সাম্প্রতিক উল্লম্ফনের প্রধান কারণ।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভারতে | করোনার | রেকর্ড | একদিনে | আক্রান্ত | দুলাখ | ১৭ | হাজার