মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি ইরানের চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন দমনে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন’র একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
একটি বিশদ বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ চলাকালে বেআইনি বল প্রয়োগের ফলে ২৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত এই শিশুদের নাম প্রকাশের পাশাপাশি কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে সেটিও তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টি বলছে নিহত শিশুদের মধ্যে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২০ জন ছেলে ও তিনজন মেয়ে। এই শিশুদের বেশিরভাগ নিহত হয়েছে তাদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া গুলিতে। এছাড়া চার শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিক্ষোভের নামে ইরানি গার্ড এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সদসদের হত্যা করা হচ্ছে বলে পালটা অভিযোগ এনেছে ইব্রাহিম রাইসির সরকার। ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত পুলিশ, সেনা ও আধা সেনা মিলিয়ে অন্তত ২০ জনকে হত্যা করেছে বিক্ষোভকারীরা। এদের মধ্যে দু’জন অফিসারকে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) গুলি করে হত্যা করা হয়। আততায়ীরা মোটর সাইকেলে করে এসে ওই দুই অফিসারের মাথা এবং বুকে গুলি করে পালিয়ে যায় বলে দাবি করা হচ্ছে।
তেহেরানের দাবি, এসবের নেপথ্যে রয়েছে বিদেশি শত্রুর হাত। এই ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিশানা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
যদিও হিজাব আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশই ইরান সরকারের যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, বিক্ষোভ থামানোর নামে নির্যাতন করার জন্যেই জনগণের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে ইরানি গার্ডকে। এক আন্দোলনকারীর বলেন, গেলো ৩০ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভে সামিল থাকায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে ইরানি গার্ডের কমান্ডাররা। এরপরই স্থানীয়রা ছয় গার্ডকে পিটিয়ে মারে।
হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গেলো ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাহসা আমিনি।
পুলিশি নির্যাতনে আমিনির প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এই ঘটনার পর ইরানে গেলো তিন বছরের মধ্যে বৃহত্তম বিক্ষোভ শুরু করেছেন দেশটির তরুণ-তরুণী, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। আন্দোলনকারী তরুণ-তরুণীরা হিজাব খুলে প্রায় প্রত্যেক দিনই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছে।