বাচ্চা হচ্ছে না মানেই সমস্যাটা শুধু মেয়েটির। ৪৫ বছর হয়ে গিয়েছে মানে আর বাচ্চা হবে না। হলেও সুস্থ হবে না। টেস্টটিউব বেবি-র শরীরে বাবা-মায়ের জিন থাকে না। এমন হাজারো ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে আছে টেস্টটিউব বেবি নিয়ে।
তবে এসব ভূল ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিনে দিনে টেস্টটিউব পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম টেস্ট টিউব বেবির নাম লুইস ব্রাউন। তার জন্ম ১৯৭৮ সালের ১১ নভেম্বর ইংল্যান্ডে। সাধারণত নারীদেহের অভ্যতন্তরে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনের ফলে নিষেক হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে সৃস্ট সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন লন্ডনের দুইজন চিকিৎসা রবার্ট জি. এডওয়ার্ডস এবং প্যা ট্রিক স্টেপ্টো।
দেরিতে হলেও বাংলাদেশে টেস্টটিউব বেবি জন্মদানের প্রযুক্তি আয়ত্বে এসেছে।
এক সময় এটি নিয়ে এদেশের অনেকে ভাবতো, এভাবে সন্তান লাভে ধর্মীয় বিধি নিষেধ থাকতে পারে। অনেকে ধারণা করতো টেস্টটিউব বেবির জন্মের পদ্ধতি হয়তো টিউবের মধ্যে। আবার কেউ কেউ মনে করতেন, টেস্টটিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেয়া কোনো শিশু।
সম্প্রতি অনেক নারী-পুরুষ বন্ধ্যাত্ব জনিত সমস্যায় ভুগছেন। সারাবিশ্বে এ হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশেও বন্ধ্যাত্বের হার বাড়ছে। এই হার প্রায় ১২ শতাংশ। বাংলাদেশে নারীর তুলনায় পুরুষের বন্ধাত্বের হার ক্রমেই বাড়ছে।
টেস্টটিউব বেবি নেয়া হয় মূলত ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন, কিংবা আইভিএফ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে।
এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু ল্যাপারেস্কোপিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা হয়। তা প্রক্রিয়াজাত করে ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়।
এছাড়া একই পদ্ধতিতে স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। পরে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বেছে নেয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের একঝাঁক শুক্রাণু।
তারপর অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশীল শুক্রাণুকে ছেড়ে দেয়া হয় নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে রাখা ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এই পেট্রিডিশটিকে তারপর সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের পরিবেশ অনুরূপ একটি ইনকিউবেটরে।
ইনকিউবেটরের মধ্যে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পরই বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে। ভ্রূণ সৃষ্টির পর সেটিকে একটি বিশেষ নলের মাধ্যমে জরায়ুতে সংস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়।
জরায়ুতে ভ্রূণ সংস্থাপন হওয়ার পরই চূড়ান্তভাবে বিকাশ লাভের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় নবজাতক। কোনো টেস্টটিউবে এই শিশু বেড়ে ওঠে না।
বাংলাদেশে টেস্টটিউব বেবির সফলতার হার শতকরা প্রায় ৩০-৪০ ভাগ। চিকিৎসা খাতে উন্নত দেশগুলোতে এই হার শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ। তবে নারীদের বয়সের সাথে এই হার অনেকটাই সম্পর্কিত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই হার কমতে থাকে। ৪৩ বছর বয়সের পর এই হার একদম কমে যায়। ৪৩ বছর বা তার চেয়ে বেশী বয়সের নারীদের ক্ষেত্রে সফলতার হার শতকরা ৫ ভাগ। ৩৮-৪০% বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ২১ ভাগ। ৩৫-৩৭ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ৩১ ভাগ। ৩৪ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ৪০ ভাগ।
বাংলাদেশে প্রথম ২০০১ সালের ৩০মে টেস্টটিউব বেবি হিসেবে তিন নবজাতকের জন্ম হয় এবং তাদের নাম হীরা, মণি ও মুক্তা। তাদের বাবা আবু হানিফ এবং মা ফিরোজা বেগম। সেসব শিশুরা বেড়ে উঠছে আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই।