আল্লামা আহমদ শফী হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে আল্লামা শফীর অনুসারীরা।
আজ বুধবার (২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি.আই.পি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন তারা এ দাবি জানান। এসময় আল্লামা শফীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কওমি মাদ্রাসার হিফজ ও মক্তব খুলে দেয়া এবং নিরপরাধ আলেমদের গ্রেপ্তার বন্ধের দাবিও জানানো হয়।
হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা নুরুল ইসলাম জাদিদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর তিন দিন আগে থেকেই হাটহাজারীতে ভাঙচুর চালানো হয়। একশ বছরের বেশি বয়সী একজন আলেমের নাতির গলায় ভাঙা কাঁচ ধরে বলা হয়েছিল, ‘এই বুইড়া, স্বাক্ষর কর, না হয় তোর নাতিকে হত্যা করবো।’ এ কথা বলে জোর-জবরদস্তিমূলক স্বাক্ষর নিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। চাপাতি, রামদা, লাঠি, দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত চরম ও উগ্রপন্থীদের দিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। এসবের পরও কি বলতে হবে, শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছিল? হাটহাজারী মাদ্রাসা একটি চরমপন্থি উগ্রগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সহজ-সরল ছাত্রদের উস্কানি দেয়া হয়েছিল, সবকিছুই তো দেশবাসীর সামনে পরিষ্কার। তারপরও বলতে হবে আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছিল?
এতে আরও বলা হয়, আরও জঘন্যতম বিষয় হলো- হেফাজতের তথাকথিত বর্তমান আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী গত ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে সামনে বসিয়ে রেখে বলেছেন, হুজুরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে বলেন, মাদরাসায় কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি মিথ্যাচারপূর্ণ ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। এই বক্তব্য বড়ই বেদনাদায়ক। তার এমন বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে তার ক্যাডারদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আড়াল করার অপচেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. আল্লামা শাহ আমদ শফীর ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ ঘটনায় দাখিলকৃত মামলা ও পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. আল্লামা শফীর পরিবারের সদস্যদের ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা মামলা তুলে নেয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. আহমদ শফীর রেখে যাওয়া সব দ্বীনি ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে তার বিরোধীদের অপসারণ করতে হবে।
৪. অবিলম্বে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর মক্তব ও হিফজ বিভাগ খুলে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে কিতাব বিভাগও খুলে দিতে হবে।
৫. শান্তি-শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় গ্রেফতারকৃত নিরীহ, নিরপরাধ আলেমদের মুক্তি দিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সারাদেশে নিরপরাধ আলেমদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মাঈনুদ্দিন, ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আবদুল হামিদ (মধুপুরী পীর), মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহি, মাওলানা সলিমুল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমিন খান উজানি, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাইফী প্রমুখ।
শেখ সোহান