প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে অনুমতির অন্ধকারে আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। তিন বছর ধরেই ছবিটি মুক্তির দাবি উঠছে নানা মাধ্যম থেকে। কিন্তু তাতে তেমন কোনও হেলদোল মিলছে না চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড তরফে। তবে ছবিটিকে মুক্তির আলোয় আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে সংস্কৃতিকর্মীদের। সেই ধারাবাহিকতায় ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়েছেন শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী।
গেলো মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সিনেমা-নাটক-সংগীত ও শিল্প-সংস্কৃতির এমন নানা ক্ষেত্রে, নানা সময় হাজির করা হচ্ছে বহুমুখী বাধা, যা নিয়ে তারা সবাই উদ্বিগ্ন। লিখিত সেই উদ্বেগ-বার্তায় তাদের ভাষ্যটি এমন, ‘‘এ উদ্বেগ আরও বাড়ে যখন দেখি, আমাদের বন্ধু সুহৃদ চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ বিনা কারণে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকে”।
মোট ১৩০ জনের এই যৌথ উদ্বেগে জানানো হয়, তারা জানতে পেরেছেন ১৭ নভেম্বর এই ছবির বিষয়ে আপিল কমিটির একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে।
যেখানে বলা হয়, ‘‘শনিবার বিকেল’ নামের সিনেমাটি বিগত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকা পড়ে আছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ছবিটি দেখেছি এবং বুঝতে অপারগ হচ্ছি কেন এই ছবিটির সঙ্গে এরকম আচরণ করা হচ্ছে। আমরা তাই ছবিটির নির্মাতার হতাশা ও মর্মবেদনা অনুভব করতে পারছি। সারা পৃথিবীতে যখন সেন্সরের ধারণাটি একটি বাতিলযোগ্য পুরোনো ধ্যান ধারণা হিসেবে আলোচিত হচ্ছে, ঠিক তখনই আমরা সেন্সর, দীর্ঘসূত্রতা এবং অজানা কোনও কারণে সময়ের একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকারের কাজ আটকে রেখেছি”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘এ দেশের নাগরিক ও শিল্পী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা বলতে চাই, আমাদের প্রজ্ঞা ও বিবেচনায় এই দীর্ঘসূত্রতা আমাদের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে এবং সব কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই মুহূর্তে ‘শনিবার বিকেল’ শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র আটকে রাখার বিষয় নয়, এটি সামগ্রিকভাবে দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিতকে অনুধাবন করতে না পারার বাস্তবতা। রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির অচলায়তা এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাও নির্দেশ করে, যা কাম্য নয়। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের বিরূপ আচরণ আমাদের ব্যথিত করে। আমরা যেন ভুলে না যাই, ভাষাভিত্তিক জাগরণে বাংলা নামে যে দেশ ৫০ বছর আগে তৈরি করেছি, তার মৌল চেতনা যেকোনও কিছুকে আটকে দেওয়ার পরিপন্থি। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্রসহ যেকোনও শিল্প মাধ্যম যখন প্রতিনিয়ত অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং পুরস্কৃত হচ্ছে। সিনেমাটির সঙ্গে নিজ দেশে এই অন্যায্য আচরণে মনে হয়, সম্ভবত আমরা এই দেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বাস করছি।”
বিবৃতিদাতারা হলেন- মামুনুর রশীদ, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সারা যাকের, সৈয়দ জামিল আহমেদ, শিমূল ইউসুফ, আফজাল হোসেন, ছটকু আহমেদ, মোরশেদুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, ঢালী আল মামুন, শামীম আখতার, মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, মুনেম ওয়াসিফ, আনিসুল হক, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, ক্যাথরিন মাসুদ, সৈয়দ গাউসুল আলম, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, নুরুল আলম আতিক, ত্রপা মজুমদার, এনামুল করিম নির্ঝর, পিপলু আর খান, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, নূর সাফা জুলহাজ, মুশফিকুর রহমান, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, কামার আহমাদ সায়মন, সারা আফরিন, রুবাইয়াত হোসেন, শিহাব শাহীন, জসিম আহমেদ, গোলাম হায়দার কিসলু, মহসিনা আখতার, শাহীন সুমন, আহসান হাবীব নাসিম, রওনক হাসান।
তালিকায় আরও আছেন চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, আনুশে আনাদিল, ইস্তেখাব দিনার, ওয়াহিদ তারেক, মেজবাউর রহমান সুমন, শিবু কুমার শীল, মাসুদ হাসান উজ্জ্বল, কামরুল হাসান খসরু, কচি খন্দকার, এন রাশেদ চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম কচি, রাকিবুর রহমান, তারেক আহমেদ, সৈয়দ ইমরান হোসেন কিরমানি, গোলাম মাওলা নবীর, শেখ রাজিবুল ইসলাম, বরকত হোসেন পলাশ, তাহসিন রহমান, রিপন নাথ, জাকিয়া বারী মম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আজমেরী হক বাঁধন, সুষমা সরকার, ইরেশ যাকের, আশুতোষ সুজন, শরাফ আহমেদ জীবন, আশফাক নিপুণ, রেদওয়ান রনি, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, তানিম নুর, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, মাহমুদুল ইসলাম, হুমায়ারা বিলকিস, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, আদনান আল রাজীব, আবু শাহেদ ইমন, বিজন ইমতিয়াজ, আরিফুর রহমান, রায়হান রাফী, নুহাশ হুমায়ুন, সৈয়দ শাওকি, সালেহ সোবহান অনিম।
আরও আছেন বেলায়েত হোসেন মামুন, সরদার সানিয়াত হোসেন, অনম বিশ্বাস, এশা ইউসুফ, মীম রশিদ, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেল, গোলাম কিবরিয়া ফারুকী, মিলন ভট্টাচার্য, দিলশাদ শিমুল, আফজাল হোসেন মুন্না, মুসাফির সৈয়দ, গোলাম মুক্তাদির শান, ইমরাউল রাফাত, ইমেল হক, আর বি প্রীতম, তানিম পারভেজ, মাবরুর রশীদ বান্নাহ, আতিক জামান, জয়ন্ত রোজারিও, পল্লব বিশ্বাস, পিকলু চৌধুরী, নিয়ামুল মুক্তা, শহিদ উন নবী, হাসান মোরশেদ, এবি রোকন, রুবায়েত মাহমুদ, মাজেদুল হক রানা, সেতু আরিফ, আরিক আনাম খান, কাজল আরেফিন অমি, আহমেদ হাসান সানি, সামিউর রহমান, মমিন বিশ্বাস, নাজমুল নবীন, ফাহাদ খান আব্দুল্লাহ মুক্তাদির, মাহমুদুল হাসান আদনান, শিহাব নুরুন নবী, তারেক বাবলু, শহীদুল ইসলাম, ফারজানা সান ও ইদিলা ফরিদ তুরিন।
জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’-এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনেতারা। যার মধ্যে আছেন ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
২০১৯ সালে ‘শনিবার বিকেল’ মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪১তম আসরে রাশান ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস জুরি পুরস্কার এবং কমেরসান্ত পুরস্কারসহ অনেক উৎসবে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়। এছাড়া বুসান ও সিডনিসহ অনেক উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান পায় ছবিটি।
২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ছবিটির মহড়া শুরু হয়। আর শুটিং শুরু হয় ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি, ঢাকার কোক স্টুডিওতে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সনদ পাওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি ‘শনিবার বিকেল’।