আর্কাইভ থেকে পরামর্শ

এই গরমে জাম কেন খাবেন?

এই গরমে জাম কেন খাবেন?

গরমকালের ফল হলো জাম। কালো রঙের ছোট ফলটি সব বয়সের মানুষ কমবেশি জাম খায়। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম। একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। স্বাদে কোনটি মিষ্টি আবার কোনটি টক-মিষ্টি। এর পুষ্টিগুণ অনেক। ফলটি চিকিত্‍সা ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের সর্বত্র কম-বেশি পাওয়া যায়।

জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্যালিসাইলেটসহ অসংখ্য উপাদান। যা স্বাস্থ্যের বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়েটি ফাইবারের একটি উৎস কালো জাম, এটি লিভারকে সক্রিয় করে এবং হজম সুস্থ রাখে। এ ছাড়া জামের অনেক পুষ্টিগুণও রয়েছে। 

মানসিকভাবে সতেজ রাখে 
জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।

হার্টের সুস্থতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো জাম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কালো জামের  উপস্থিতি পটাশিয়াম এবং ফসফরাসজাতীয় প্রয়োজনীয় খনিজগুলো নির্দিষ্ট কার্ডিও-ভাস্কুলার অবস্থার রক্ষা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো জাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ভিটামিন বি১,বি২,বি৩,বি৬-এর পাশাপাশি ভিটামিন সি রয়েছে কালো জামে। জাম হলো  অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোতে আক্রমণ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ
জামে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ
জাম মুখের ভেতর উত্‍পাদিত ক্যান্সারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে জামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে।

হাড়ের যত্নে
কালো জাম হাড়কে শক্তিশালী করে, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজগুলোর উপস্থিতি হাড় এবং দাঁতগুলোকে মজবুত করে।  এক গ্লাস দুধের সঙ্গে আধা চা চামচ কালো জামের গুঁড়া হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।

ত্বকের যত্নে
জামের এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্ল্যাকহেডস, পিম্পলস এবং ব্রণ হওয়া রোধ করে। ফলের রক্ত পরিশোধক বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল করে জাম।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য ভালো কালো জাম। জামে কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যা দেহে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এটি ঘন ঘন তৃষ্ণা এবং প্রস্রাবের লক্ষণগুলোও নিরাময় করে। জাম, মধু ডায়াবেটিক রোগীদের মিষ্টির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।

সাদা বা রক্ত আমাশয় 
জামের কচি পাতার রস ২-৩ চা-চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেরে যায় সাদা বা রক্ত আমাশয়।

অরুচি ও বমিভাব 
পাকা জাম লবণ মাখিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে, সেটা চটকে পুঁটলি বেঁধে টানিয়ে রাখলে যে রস ঝরে পড়বে, সেটা ২০-২৫ ফোঁটা প্রয়োজনবোধে এক চা চামচ জল মিশিয়ে খেতে দিলে পাতলা দাস্ত, অরুচি ও বমিভাব কমে যায়।

শয্যামূত্র
এ রোগে শিশু-বৃদ্ধ অনেকেই অসুবিধায় পড়েন এবং অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য মায়েদের ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে ২-৩ চা চামচ জাম পাতার রস (বয়স অনুপাতে মাত্রা) ১/২ চা চামচ গাওয়া ঘি মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খাওয়ালে এক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকার হবে।

জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ 
যাদের জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ থাকে, তারা এ পাতার রস ২-৩ চা-চামচ একটু গরম করে ছেঁকে খেলে উপকার হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে কালো জাম খেতে পারেন। তবে খালি পেটে এই ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন গরমে | জাম | কেন | খাবেন