আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সালিসের সুযোগে কিশোরীকে বিয়ে করলেন বিবাহিত চেয়ারম্যান

সালিসের সুযোগে কিশোরীকে বিয়ে করলেন বিবাহিত চেয়ারম্যান

প্রেমের টানে বাড়িছাড়া হয়েছিলেন দুই কিশোর কিশোরী। তাদের বিষয়ে ফয়সালা করতেই ডাকা হয়েছিলো সালিস। সেখানেই প্রাত্রী পছন্দ হয়ে যায়  ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান । যিনি নিজেই ওই কিশোরীকে (১৪) বিয়ে করেছেন।

বিষয়টি ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার (৬০)ক্ষেত্রে।

এদিকে সালিসে এমন বিচার পেয়ে কিশোরীর সঙ্গে পালানো কিশোর (১৯) আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন প্রেমিক কিশোর।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শাহিনের তাঁর প্রথম স্ত্রী আছেন এবং সেই সংসারে তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিবাহিত।

এদিকে বিষয়টি ১৪ বছরের শিক্ষার্থীকে ৬০ বছরের একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিয়ে করা।  এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ও এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কিশোরী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিশোরীর সঙ্গে এক কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক। গেল বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজন পালায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান।

এরপর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আনুষ্ঠানিকভাবে কিশোর কিশোরীর বিয়ে দেওয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখানে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। কিশোরকিশোরীর বিয়ের বিষয়ে আর কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। বড় ভাইয়ের দাবি, সাদা কাগজে সই নিয়ে তাঁদের দুপুরের দিকে বের করে দেন চেয়ারম্যান।

স্থানীয় লোকজন ও মেয়েটির পরিবার জানিয়েছে, কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। বিয়ের কাবিননামায় মেয়েটির জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। বিয়ের পর মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। তবে বাড়িতে তাঁর প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না।

বিয়ের খবর শুনে ছেলেটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি। অচেতন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মো. ফিরোজ আলম।

আজ শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই ছেলে বলে, ‘ওকে আমার কাছে এনে দেন। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।

ঘটনা জানার জন্য আজ শনিবার (২৬ জুন) মেয়েটির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সামনে লোক আছে। এখন কিছু বলব না। তবে প্রেমের টানে মেয়ের বাড়িছাড়ার এবং চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেক বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করেন। এবং বলেন, মেয়েটির জন্মনিবন্ধন দেখে তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, নিজের প্রয়োজনে খুবই গরিব ঘরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি। কাউকে মেরে ফেলার হুমকি কিংবা জোর করার বিষয়টি সত্য নয়।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন জানান, ‘খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ পাঠানো হয়েছে ছেলেটির খোঁজ নেওয়ার জন্য।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তা সঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সালিসের | সুযোগে | কিশোরীকে | বিয়ে | বিবাহিত | চেয়ারম্যান