বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের যে সমস্যাগুলো অভিভাবকদের ভাবায়, তার মধ্যে অন্যতম হল সন্তানের মিথ্যা কথার বলার প্রবণতা। মনোবিদদের মতে, বকুনি খাওয়ার ভয়ে মিথ্যা বলা দিয়েই এই অভ্যাস বাসা বাঁধে শিশুদের স্বভাবে। কোনও কোনও সময়ে মা-বাবা এই স্বভাবকে অবহেলা করে গেলেও তা পরে বড়সড় আকার ধারণ করে। শুধু তা-ই নয়, কথায় কথায় মিথ্যা বলার এই স্বভাব শিশুর জীবনেও নানা ক্ষতি করে, ছোট থেকেই তা রুখে না দিলে এই অভ্যাস খুব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।
রোজকার রুটিনে আমাদেরও কখনও কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, কিন্তু তা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়। শুধু তা-ই নয়, শিশুরা যেহেতু ঘটনার গুরুত্ব বোঝে না, তাই এ সমস্যা নিয়ে প্রথম থেকেই সচেতন না হলে, ছোটবড় সব বিষয়েই তাদের মিথ্যা বলার প্রবণতা অজান্তে বেড়ে যায়।
শিশুরা অনেক সময় বড়দের নজর নিজের দিকে টানতে মিথ্যা বলে। কখনও কল্পনার আশ্রয় নিয়ে, আবার কখনও বকুনির ভয়ে মিথ্যা কথা বলে তারা। এ স্বভাবের জন্য অনেক বাবা-মা-ই শিশুদের অনেক বকাবকি করেন। তবে শাসন বা মারধরে না গিয়েও এ স্বভাব রুখে দিতে পারেন আপনি।
শিশুকে প্রথম থেকেই গল্পের ছলে মনীষীদের জীবনী, ঈশপের গল্প, নীতিকথা শেখান। বড় মানুষরা কেউ মিথ্যা পছন্দ করতেন না অথবা মিথ্যা বিষয়টা খুব একটা গ্রহণীয় নয়— সে ধারণা ছোট থেকেই তাদের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিন।
শিশুদের সামনে যতটা সম্ভব মিথ্যা এড়িয়ে চলুন। তারা কিন্তু অভিভাবকদের থেকেই সবচেয়ে বেশি শেখে।
মিথ্যা বলা কতটা খারাপ কিংবা আপনাদের বাড়ির সকল সদস্য এই মিথ্যা বলাকে কতটা ঘৃণা করেন— সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা শিশুকে দিন। মিথ্যা কথা বললে আপনি বকাবকি না করে ওর সঙ্গে খানিক ক্ষণ কথা বলা বন্ধ করে দিন, দেখুন তাতে সমস্যা কমে কি না।
আপনার সন্তান কোন বন্ধুর সঙ্গে মিশছে, সেদিকে লক্ষ রাখুন। তার চারপাশের বন্ধুরা কেমন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। তাদের মধ্যে কারও মিথ্যা বলার প্রবণতা থাকলে তা যেন আপনার শিশুকে প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়টিও নজরে রাখুন।
কোনটা মিথ্যা আর কোনটা কল্পনা, তা আগে নিজেরা বুঝুন। কোনও কোনও কল্পনা শিশু বয়সের জন্যই নির্ধারিত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা কেটেও যায়। কাজেই ছোটখাটো কল্পনাকে মিথ্যা ভেবে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। শাসনের বাড়াবাড়ি নয়, দরকারে কথা বলুন শিশুর সঙ্গে। কোনও ভাবেই মিথ্যা রুখতে না পারলে মনোবিদের পরামর্শ নেয়াই ভাল।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনসন্তান | মিথ্যে | বলছে | সামলাবেন | যেভাবে