দিনটা ২০০৫ সালের ২৪ এপ্রিল। শখের বসেই ইউটিউবের প্রথম ভিডিও আপলোড করেছিলেন ২৫ বছরের জাভেদ করিম নামের এক যুবক। আহামরি কোনও ভিডিও ছিলোনা তা। লো-রেজুলেশনের সেই ভিডিওর ডিউরেশন ছিল মাত্র ১৯ সেকেন্ড।
'মি এট দ্য জু' শীর্ষক সেই ভিডিওতে ছিলেন দুইটি হাতি আর জাওয়াদ। ভ্লগের মত করে জাভেদ বলছিলেন তিনি একটি চিড়িয়াখানায় আছেন। আর বলছিলেন তিনি দুটি হাতির সামনে এবং হাতিগুলো শুঁড় অনেক লম্বা। স্যান দিয়েগো চিড়িয়াখানায় হাতিরা তাদের শুঁড়টি কীভাবে সামলায়। এমনটাই তুলে ধরেছিলেন জাভেদ।
তবে জাভেদ সেদিন হয়তো জানতেন না তিনি এমন একটি প্লাটফর্মে প্রথম ভিডিও আপলোড করলেন যা কিনা একদিন সারা বিশ্বের জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। ১৭ বছর আগের সেই ভিডিওটির ভিউ ছাড়িয়েছে প্রায় ২৪৯ মিলিয়নে।
প্রযুক্তির প্রতি ভালো লাগা থেকেই করিম প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের একজন। জাভেদ করিমকে শুধু প্রথম ইউটিউবার বললে ভুল হবে। তিনি ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতাও। জাভেদ করিম, চ্যাড হার্লি এবং স্টিভ চ্যান মিলে ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বাংলাদেশি গবেষক বাবা নাইমুল করিম এবং জার্মান বিজ্ঞানী মা ক্রিস্টিন করিমের সন্তান জাভেদ করিমের জন্ম ২৮শে অক্টোবর, ১৯৭৯ সালে। ২০০৪ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশুনা করেন জাভেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দুই হার্লি আর স্টিভ। তারা তিনজন পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরী করতেন অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান পেপালে । অল্প বয়সেই ভালো চাকরী ভালো বেতন। হঠাৎ পেপাল কোম্পানিকে কিনে নিল আরেক প্রতিষ্ঠান ই- বে।
চাকরি হারিয়ে সেই তিন তরুণ এবার বেকার। তবে এবার ভালো চাকরিজীবী নয় স্বপ্ন তাদের উদ্যোক্তা হবার। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে ভয়ংকর সুনামির ফুটেজ যখন কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলো না জাভেদ এর মাথায় আসলো আচ্ছা এমন একটি ওয়েবসাইট করলে কেমন হয় যেখানে ভিডিও আপলোড করা যাবে বা জমা রাখা যাবে। যেহেতু প্রযুক্তি নিয়েই তাদের কাজ। আইডিয়া আসলো একটা ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট তৈরি করার? তাই বলা হয়ে থাকে জাভেদই ইউটিউবের প্রথম উদ্ভাবক।
যেই কথা সেই কাজ। শুরু হল ইউটিউবের যাত্রা। দুইজন কম্পিউটার প্রকৌশলী ও একজন ডিজাইন এক্সপার্ট। বারবার পরিবর্তন, সংশোধন করে দাঁড়িয়ে গেল সুন্দর একটি ডিজাইন। তারপর ২৩ জুন জাভেদ আপলোড করলেন তার প্রথম ভিডিও। তবে যাত্রাটা কিন্তু শুরু! একে মানুষের কাছে পৌঁছুতে দরকার কিছু বিশাল পরিমাণ অর্থের। ভাবনায় পড়ে গেলেন, কোথায় পাবেন এতো টাকা? তারা ঘুরতে থাকেন ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট বা বিনিয়োগকারীদের দাঁড়ে দাঁড়ে। তাদের পরিকল্পনা শুনে বিনিয়োগ করতে রাজি হয় স্কুইয়া ক্যাপিটালিস্ট।
তারপর ব্রডকাস্ট ইয়োরসেলফ” শ্লোগান নিয়ে বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত হয় ইউটিউব। ইউটিউবের যাত্রায় প্রসার বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে বিনিয়োগ। ২০০৬ সালে সার্স ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল ১৬৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় ইউটিউবকে। জাভেদ নিজ অংশে পেলেন ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ত
বে তিনি সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক আইডিয়া শুরু করতে সাহায্য করেন।
জনপ্রিয় অনলাইন ভিডিও প্লাটফর্ম ইউটিউব। ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিলো এর যাত্রা। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এ প্লাটফর্মে ৩৭ মিলিয়ন চ্যানেলে ৮০০ মিলিয়নের বেশি ভিডিও রয়েছে।