এবারের ঈদে ঢাকায় ২১টি পশুর হাট বসছে। মহামারি রোধে হাটগুলোতে আরোপ করা হয়েছে ৪৬টি শর্ত। দুই সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ক্রেতা-বিক্রিতা বা ইজারাদারকে এসব শর্ত কঠোরভাবে পালন করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে। শর্ত ভাঙলেই নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
শর্তগুলো হচ্ছে-
খোলামেলা জায়গায় হাট বসাতে হবে। হাট বসানোর আগে মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করবেন ইজারাদার। তাকে পানি ও সাবান ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিস্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
হাটের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মকচারী ও কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কমিটির সকলের ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
হাঁচি, কাশির শিষ্ঠাচার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়ার কথা সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে। হাটে প্রবেশের সময় গ্রাহক চাইলে তাকে বিনামূল্যে মাস্ক দিতে হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি করা যাবে না। একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেন ক্রেতাদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব থাকে।
ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইন দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে। হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু ঢোকাতে হবে।
প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশনের এক বা একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টিম গঠন করে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিমের কাছে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ডিজিটাল থার্মোমিটার থাকতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা করার জন্য হাটে একটি আইসোলেশন ইউনিট রাখতে হবে।
হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দিতে হবে। বাকিরা বাইরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করবেন।
একটি পশু কিনতে একসঙ্গে দুজনের বেশি হাটে ঢুকতে পারবে না। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেটের দুই পাশে এবং পশুর হাটের মাঝে পর্যাপ্ত সংখ্যক পানির আধার, বেসিন ও সাবান এবং আলাদা স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। হাটে ঢোকার আগে ও বের হয়ে ক্রেতাকে হাত ধুতে হবে।
হাটে সকল কর্মীকে স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের মধ্যে মাস্ক ও ফেস শিল্ডের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা ক্রেতাকে হাটে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। শিশু ও বৃদ্ধদেরও ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
মানুষকে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম পরিচালনায় 'বি হ্যাপি’ সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে।
হাট ও ইজারা নিয়ে আরও যত শর্ত
অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিন চালু থাকবে। এ হাটে বিক্রিত পশুর মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হাসিল আদায় করা যাবে। প্রতিটি হাসিল বুথে ধার্যকৃত হার স্পষ্টভাবে লিখে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট নকশা ও তফসিলের সীমানার বাইরে হাট বসানো যাবে না।
হাইকোর্টের নির্দেশনামতে, রাস্তায় ও খেলার মাঠ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানো যাবে না। রাস্তায় খুঁটি বসানো যাবে না।
হাটের সুবিধাজনক স্থানে সিটি করপোরেশনের জন্য একটি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের জন্য একটি, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য একটি এবং জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপনের জন্য একটি অস্থায়ী বুথ বানিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি বুথের ওপর পরিচিতিমূলক ডিজিটাল ব্যানার লাগাতে হবে।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেয়ার-টেবিল, আলো ও বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা আদান-প্রদানের সুবিধায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাংকের বুথ স্থাপন করতে হবে। ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। হাটে উঁচু টাওয়ারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
হাটের যেখানে সেখানে আর্বজনা ফেলে রাখা যাবে না। একটি ছোট স্থানে আর্বজনা স্তূপ করে রাখতে হবে।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার দায়িত্ব তাৎক্ষণিকভাবে ইজারাদার গ্রহণ করবেন।
সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবেন ইজারাদার। ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে হাটে পশু প্রবেশ করানো যাবে না। হাটের আশপাশের সড়ক দিয়ে যাওয়া কোনও পশুর ক্রেতার কাছ থেকে জোরপূর্বক হাসিল আদায় করা যাবে না।
সিটি করপোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল কাজ নিশ্চিত করতে হবে। হাট শেষ হওয়ার দুই দিনের মধ্যে বাঁশ ও খুঁটি অপসারণ না করা হলে ব্যয়কৃত অর্থ জামানতের অর্থ থেকে সমন্বয় করা হবে।
বিক্রি শুরুর দুই দিন আগে হাটে খুঁটি বসানো যাবে না বা পশু হাটে প্রবেশ করানো যাবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খাবারের ক্যান্টিন বা হোটেল স্থাপনে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের জন্য স্টল বরাদ্দের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিধি ও নিয়মানুযায়ী হাসিল (ফিস) আদায় হয় কিনা তা তদারকির জন্য সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হাটে প্রবেশে সহায়তা করতে হবে। ইজারাদার কর্তৃক সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মশক সুপরভাইজারে সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজ দায়িত্বে হাটের মধ্যে নিয়মিত এডিস মশার ওষুধ স্প্রে করতে হবে।
শর্তগুলোর কোনও একটিও যদি মানা না হয় তবে ইজারা বাতিলসহ ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঢাকা উত্তরে একটি স্থায়ী হাটসহ মোট ১০টি হাট বসবে। এগুলো ঈদের চার দিন আগেই বসবে। ঈদের দিনও হাট চলবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিএসসিসিতে এবছর একটি স্থায়ীসহ ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। ৪৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছি। এগুলো মেনে হাট চালাতে হবে।’