জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিজস্ব নতুন ভবন ও দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় আগারগাঁওয়ে এনবিআরের নতুন রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরপরই সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে রাজস্ব সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
রাজস্ব প্রদানে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও রাজস্ব বান্ধব মানসিকতা বিকাশের উদ্দেশ্যে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি (রোববার ও সোমবার) আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাজস্ব ভবন উদ্বোধন ও রাজস্ব সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দেবেন। দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনে রাজস্ব আদায়, ভ্যাটের ও আয়করের ভূমিকা নিয়ে একাধিক সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে মতবিনিময় এবং স্টল স্থাপনের মাধ্যমে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিষয়ক সেবাগুলোর বিষয়ে সাধারণ জনগণকে বাস্তবিক ধারণা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে অস্থায়ীভাবে নির্মিত রাজস্ব মিউজিয়ামে ভ্যাট, আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের ঐতিহাসিক দলিল, গেজেট ও ঐতিহাসিক বস্তুগুলো সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি যেসব আয়োজন থাকছে
১ম দিনে ভ্যাট বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে দুপুর ২টায় “জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন।
২য় দিনের প্রথমভাবে আয়কর বিষয়ক সেমিনার থাকছে। সকাল ১০টায় “আয়কর ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আয়করের ভূমিকা”এবং “আয়কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা” বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
৬ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় ভাগে থাকছে কাস্টমস বিষয়ক সেমিনার। দুপুর ২টায় “বাংলাদেশ কাস্টমস : স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণের সারথী’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তিনটি সেমিনারই সভাপতিত্ব করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি এনবিআরের নবনির্মিত রাজস্ব ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন আধুনিক জাতীয় রাজস্ব ভবনটি ২০তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত হলেও বর্তমানে ১২তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়েছে। ভবনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত। ভবনের মোট আয়তন ছয় লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্টের আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট।
এনবিআরের সব অফিসের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিইসি), কর জরিপ দপ্তর, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-কর), বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট), কর আপিলাতসহ কয়েকটি কর অঞ্চলের কার্যালয় আগারগাঁওয়ের নতুন ভবনে চলে যাবে।
নতুন রাজস্ব ভবনে যেসব সুবিধা থাকছে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নতুন ভবনটিতে ৮টি লিফট রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি ফায়ার লিফট। রয়েছে ৫১০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, রেভিনিউ আর্কাইভ, লাইব্রেরি, রেকর্ডরুম, সেন্ট্রাল ডেটা প্রসেসিং সেন্টার ও সার্ভার স্পেস। কম্পিউটার ল্যাব, ট্রেনিং সেন্টার, কমার্শিয়াল ব্যাংক শাখা, এটিএম, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, স্টেশনারি শপ, বার লাউঞ্জ, প্রতি তলায় গ্রিন স্পেস ও স্মোকিং জোন থাকবে। সুবিধার মধ্যে আরও রয়েছে সার্বক্ষণিক জেনারেটর সুবিধা, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিকিউরিটি সিস্টেম, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনদের প্রবেশ, নির্গমন ও চলাচলের ব্যবস্থা, জরুরি অবস্থায় প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, ক্যাফেটেরিয়া, কল সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, মিডিয়া সেন্টার, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, প্রতি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক টয়লেট জোন ইত্যাদি।
২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হলে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। নকশা পরিবর্তনে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় যাত্রা শুরু করছে রাজস্ব ভবন।