চিনি ছাড়লে যে যে উপকার পাবেন...
আমাদের প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম অংশ হলো চিনি। বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট, মিষ্টি, শরবত ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই চিনি। চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবারের প্রতি আমাদের ভালোলাগার কথা অস্বীকার করা যায় না তবে এটিও মনে রাখা জরুরি যে, চিনিযুক্ত খাবার বেশি খেলে শরীরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চিনিতে অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ফ্যাট থাকে। এটি ওজন বাড়ানোর জন্যও দায়ী। তবে ফল এবং সবজিতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরের জন্য উপকারী। সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি খেতে শুরু করেন।
চিনি খাওয়া কমিয়ে দিলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। চলুন তা জেনে নেয়া যাক।
ওজন কমে
অল্প পরিমাণ চিনিতেও থাকে প্রচুর ক্যালোরি। আমরা সারাদিনে নানা ভাবে চিনি খাই। চায়ে দিই। রান্নাতেও চিনির ব্যবহার হয়। কোল্ডড্রিংকস, প্যাকেটজাত ফলের রস, লস্যি, স্যস, চকোলেট, ক্রিম রোল, মিষ্টিতেও চিনি মেশানো থাকে। ফলে দিনে গড়ে প্রায় ২০-২২ চামচ চিনি খেয়েই ফেলি। ১ চা চামচ চিনিতে প্রায় ১৬ কিলো ক্যালোরি এনার্জি থাকে। সারাদিনে প্রায় একজন ব্যক্তি চিনির মাধ্যমে ৩২০ কিলোক্যালোরি বা তারও বেশি এনার্জি গ্রহণ করেন। তাই ডায়েট থেকে শুধু চিনি এবং চিনি মেশানো খাবার বাদ দিলেই মাসে প্রায় ১ কেজি ওজন কমানো সম্ভব।
লাগাম হার্টের অসুখে
বেশি চিনি খাওয়া মানেই রক্তে ইনসুলিন বাড়ে। হার্ট রেট ও রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কাও থাকে। প্রায় ১ লাখ মহিলার মধ্যে এক সমীক্ষা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত এনার্জির ১৫ শতাংশও চিনি মেশানো খাদ্য থেকে এলে, করোনারি হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা বাড়ে ২০ শতাংশ।
বয়সও দেখাবে কম
চিনির জন্য ত্বকের কোলাজেন ভাঙতে শুরু করে। টানটান ভাব নষ্ট হয়। চিনি বাদ দিলে কোলাজেনও অটুট থাকে। বয়সও দেখায় কম।
নেশা কমবে
চিনি বা চিনি দেয়া খাদ্য পানীয় খেলে ব্রেনে ডোপামিন ক্ষরণ হয়। তাৎক্ষণিক আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়। ফলে বারবার চিনি খেয়ে আমরা আনন্দলাভের চেষ্টা করি।
অনেকে দ্রুত এনার্জি পেতে চিনি মেশানো পানীয় বা খাদ্য খান। এই অভ্যেসও চিনির প্রতি আসক্তি তৈরি করে। ফলে হুট করে চিনি বন্ধ করলে কারও কারও মন খারাপ হতে পারে। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন, ক’দিনেই শরীর সুগারহীন অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেবে। আপনি আরও সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমায়
চিনিতে প্রচুর ক্যালোরি থাকে। বেশি মাত্রায় ক্যালোরি গ্রহণ শরীরের ফ্যাট বাড়ায়। ফ্যাট বাড়লে তা ইনসুলিনের মাত্রার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বেশি ফ্যাটের জন্য ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও হতে পারে। দেখা দিতে পারে টাইপ -২ ডায়াবেটিস। তাই সুগার ছাড়লে আশঙ্কা কমবে ডায়াবেটিসেরও।
স্মৃতিশক্তি
বেশিমাত্রায় সুগার খেলে ব্রেনের স্নায়ুকোষগুলি নষ্ট হতে পারে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তিতে।
দূরে থাকবে অনিদ্রা
বেশি রাতে চিনিমেশানো খাদ্যগ্রহণ করলে তা দীর্ঘসময় জাগিয়ে রাখে। কারণ চিনি ক্লান্তি দূর করে। শরীরে একসঙ্গে অনেকখানি এনার্জির জোগান দেয়। এই কারণেই অনিদ্রার পিছনে চিনির বড় ভূমিকা আছে।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যরক্ষা
যে কোনও চিনিযুক্ত খাদ্য দাঁতের ক্ষয়ে বড় ভূমিকা নেয়। কারণ মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া চিনি খায়, বংশবৃদ্ধি করে এবং অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের এনামেল নষ্ট করে। দাঁতের দ্রুত ক্ষয় হয়।
ফ্যাটি লিভারের আশঙ্কা কমায়
চিনি হল সুক্রোজ। শরীরে সুক্রোজ প্রবেশ করলে তা গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজে পরিণত হয়। ফ্রুক্টোজ আবার লিভারে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা হয়। মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ তৈরি হয়। লিভার তখন বাড়তি গ্লাইকোজেনকে ফ্যাটে পরিণত করে। যা জমা হয় লিভারেই। দেখা দেয় নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
কেএস