আর্কাইভ থেকে এশিয়া

ক্রসফায়ার নয়, সাংবাদিক দানিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তালেবান!

ক্রসফায়ার নয়, সাংবাদিক দানিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তালেবান!

আফগানিস্তানে সংঘর্ষ বা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হননি পুলিৎজারজয়ী ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। বরং পরিচয় জানার পরই তাকে আটক করে বর্বরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।

সম্প্রতি এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ওয়াশিংটন এক্সামিনার। মার্কিন লেখক, গবেষক ও সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল রুবিনের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে সাময়িকীটি। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যামেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

সাময়িকীর প্রতিবেদকের দাবি, ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের কাছ থেকে দানিশের মরদেহের একাধিক ছবি পেয়েছেন মাইকেল রুবিন। সেখানে দেখা গেছে, প্রয়াত সাংবাদিকের মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বুলেট দিয়ে ঝাঁঝরা করা হয়েছে পুরো শরীর।

আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াইয়ের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন রয়টার্সের প্রধান ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। আগেও পেশাগত কাজে একাধিকবার দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে গিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে কান্দাহার প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করছিলেন ৩৮ বছর বয়সী এ ভারতীয় ফটো সাংবাদিক।

গেল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন এক্সামিনার জানিয়েছে, তালেবান যোদ্ধারা কান্দাহারে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী স্পিন বোলডাক এলাকা দখল করতে গেলে তাদের ঠেকাতে যায় আফগান বাহিনী। তখন সরকারি বাহিনীর গাড়িতে উঠে পড়েন দানিশও। তাদের সঙ্গেই সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান তিনি।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সীমান্ত থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে আফগান বাহিনীর ওপর প্রথম হামলা চালায় তালেবান। এতে আফগান বাহিনীর গাড়িবহর দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আফগান কমান্ডারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান দানিশ। তিনজন আফগান সেনার সঙ্গে অন্য দিকে ছিটকে পড়েন তিনি। তার শরীরে স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে। আফগান সেনারা তাকে স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

দানিশ এবং আফগান বাহিনীর তিন সেনার মসজিদে আশ্রয় নেওয়ার খবর পৌঁছে যায় তালেবানের কাছে। তাদের একটি দল মসজিদ আক্রমণ করে। ভেতরে ঢুকে দানিশকে আটক করে তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন তালেবান ধরে নিয়ে যায় তখন জীবিতই ছিলেন দানিশ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে হত্যা করে তালেবান। একই পরিণতি হয় সঙ্গে থাকা তিন সেনার। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে নিহত হয় আফগান বাহিনীর কমান্ডারসহ বাকি সেনারাও। পরে দানিশের মরদেহ আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের হাতে হস্তান্তর করে তালেবান।

মার্কিন প্রতিবেদনে মাইকেল রুবিন আরও লিখেছেন, ভারতীয় সরকার সূত্রে কিছু ছবি ও একটি ভিডিও হাতে পেয়েছেন তিনি। এতে দানিশের মরদেহের যে ছবি পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, হত্যার আগে মাথার কাছে একাধিকবার আঘাত করা হয়েছে। তারপর গুলি করে পুরো শরীর ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে এমন আঘাত থাকতে পারে না।

অবশ্য, দানিশের মৃত্যু নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ভারত সরকার। তবে কয়েকদিন আগে তার মৃত্যু নিয়ে একই দাবি করেছিল একটি ভারতীয় গণমাধ্যম। মৃত্যুর পর আফগান সরকারের সহায়তায় দানিশ সিদ্দিকির মরদেহ ভারতে নেওয়া হয়। রাজধানী দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় তাকে কবর দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, দানিশের মৃত্যুর তদন্ত হওয়া দরকার। তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের বিরোধী। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সাংবাদিককে এভাবে হত্যা করা যায় না।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে খবরের জন্য ২০১৮ সালে সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পান দানিশ সিদ্দিকি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের চিত্রসাংবাদিক ছিলেন তিনি।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ক্রসফায়ার | সাংবাদিক | দানিশকে | পিটিয়ে | হত্যা | করেছে | তালেবান