আর্কাইভ থেকে বলিউড

হিজাব পরে র‌্যাম্পে হাঁটা সুপার মডেল হালিমা!

হিজাব পরে র‌্যাম্পে হাঁটা সুপার মডেল হালিমা!

খোলামেলা পোশাক পরাই কি সাহসিকতার পরিচয়? না, সাহসিকতার সঙ্গে অন্যভাবে পরিচয় করাচ্ছেন হালিমা আদেন। আপাদমস্তক ঢেকে র‌্যাম্পে হেঁটে। হালিমা হিজাব পরে র‌্যাম্পে হাঁটা বিশ্বের প্রথম সুপারমডেল। মডেলিংকে যেখানে খোলামেলা পোশাকের সমার্থক হিসেবে ভাবা হয়, সেই ধারণা ভেঙে ফেলেছেন হালিমা। শুধুমাত্র মুখ এবং হাত-পায়ের তালু অনাবৃত রেখে র‌্যাম্পে হাঁটেন তিনি।

মডেলিংয়ের জন্য নিজেকে না বদলে বরং কাজের ধরনকে বদলাতে বিশ্বাসী হালিমা। সেই বিশ্বাসে ভর করে কেরিয়ারের শুরু থেকে নানা হেনস্তার মুখোমুখি হয়েও আজ তিনি সুপারমডেল।

২০১৬ সালে প্রথমবার বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হালিমা। মাথায় হিজাব এবং গায়ে বুরকিনি চাপিয়ে ‘মিস মিনেসোটা ইউএসএ’ প্রতিযোগিতায় যখন র‌্যাম্পে হেঁটে আসছিলেন তিনি, তাকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন বিচারকেরা। খোলামেলা মডেলদের ভিড়ে সেই প্রথম সর্বাঙ্গ ঢাকা মডেল দেখেছিলেন তারা। সেবারই প্রথম মডেলিং ইন্ডাস্ট্রির পোশাক-ধারণায় হাতুড়ির ঘা পড়েছিল। না, ওই এক দিনেই ইন্ডাস্ট্রির মানসিকতা বদলাতে পারেননি হালিমা, কিন্তু শুরুটা করে ফেলেছিলেন সেদিন।

কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরে জন্ম হালিমার। মা-বাবা দুজনই সোমালিয়ার নাগরিক। ছয় বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন হালিমা। মিনেসোটার সেন্ট ক্লাউড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তারপর সেন্ট ক্লাউড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন।

২০১৬-র ‘মিস মিনেসোটা ইউএসএ’-তে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সারা বিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরপরই একটি মডেলিং সংস্থা তাকে তিন বছরের চুক্তিতে সই করিয়ে নেয়।

মডেলিং ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর যে পদক্ষেপ তিনি করেছিলেন, ইতোমধ্যেই তা বেশ ফল দিতে শুরু করে দিয়েছিল। কখনো নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক, কখনো মিলান ফ্যাশন উইক, আবার কখনো কোনো আন্তর্জাতিক স্তরের ম্যাগজিনের জন্য ফটোশুট কিংবা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার হয়ে মডেলিং—এই ইন্ডাস্ট্রিতে ক্রমশ তার নাম হচ্ছিল।

২০১৮ সালে ইউনিসেফের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হন। ইউনিসেফের সঙ্গে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে হালিমার একটি ইনস্টাগ্রাম স্টোরি বিশ্বকে ফের চমকে দেয়। সেখানে কয়েকটি সিরিজে তিনি মডেলিং দুনিয়াকে বিদায় জানানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন।

তাতে হালিমা যা বলতে চেয়েছিলেন তার সারমর্ম হলো—তিনি অনেক চেষ্টা করলেও ইন্ডাস্ট্রির মানসিকতা বদলাতে পারেননি। তাই বারবারই তাকে হেনস্তা হতে হয়েছে। তিনি আরও যা লিখেছিলেন তা হলো—মডেলিং মানে নতুন কিছুকে গ্রহণ করা, কোনো কিছুর সঙ্গে আপস করা নয়। যিনি যেভাবে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন, তিনি সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করবেন।

হালিমা চেয়েছিলেন তার মতো আরও অনেক মহিলা—যারা শুধুমাত্র খোলামেলা পোশাকের কথা বিবেচনা করে মডেলিংয়ে আসতে পারছিলেন না, তাদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে।

মডেলিংয়ে পা রাখার পরই যেভাবে অতি উৎসাহের সঙ্গে নানা স্তর থেকে তিনি প্রস্তাব পাচ্ছিলেন, তাতে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোয় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিলেন তিনি ক্রমশ। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে তত টের পাচ্ছিলেন বহির্বিশ্বের অগ্রগতির সঙ্গে মানসিকতা বদলের সামঞ্জস্যের অভাব। প্রথম দিন থেকে আপস করতে শেখেননি হালিমা। ইনস্টাগ্রামে ইস্তফার কথা ঘোষণা করলেও র‌্যাম্পের লড়াই এখনো জারি রেখেছেন তিনি।

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন হিজাব | র‌্যাম্পে | হাঁটা | সুপার | মডেল | হালিমা